বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:কথা ও কাহিনী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
কাহিনী

সামনে বসি তার বরজলাল  ধরেছে সাহানার সুর-
সে-সব দিন আর সে-সব গান  হৃদয়ে আছে পরিপূর।
সে ছাড়া কারও গান শুনিলে তাই  মর্মে গিয়ে নাহি লাগে
অতীত প্রাণ যেন মন্ত্রবলে  নিমেষে প্রাণে নাহি জাগে।
প্রতাপরায় তাই দেখিছে শুধু  কাশীর বৃথা মাথা-নাড়া–
সুরের পরে সুর ফিরিয়া যায়,  হৃদয়ে নাহি পায় সাড়া।

থামিল গান যবে ক্ষণেক-তরে  বিরাম মাগে কাশীনাথ;
বরজলাল-পানে প্রতাপরায়  হাসিয়া করে আঁখিপাত।
কানের কাছে তার রাখিয়া মুখ  কহিল, “ওস্তাদ জি,
গানের মতাে গান শুনায়ে দাও,  এরে কি গান বলে, ছি!
এ যেন পাখি লয়ে বিবিধ ছলে,  শিকারী বিড়ালের খেলা।
সে কালে গান ছিল, এ কালে হায়  গানের বড়াে অবহেলা।”

বরজলাল বুড়া শুক্লকেশ,  শুভ্র উষ্ণীষ শিরে,
মিনতি করি সবে সভার মাঝে  আসন নিল ধীরে ধীরে।
শিরা-বাহির-করা শীর্ণ করে  তুলিয়া নিল তানপুর,
ধরিল নতশিরে নয়ন মুদি  ইমন-কল্যাণ সুর।
কাঁপিয়া ক্ষীণ স্বর মরিয়া যায়  বৃহৎ সভাগৃহ-কোণে,
ক্ষুদ্র পাখি যথা ঝড়ের মাঝে  উড়িতে নারে প্রাণপণে।
বসিয়া বামপাশে প্রতাপরায়,  দিতেছে শত উৎসাহ-
“আহাহা বাহা বাহা” কহিছে কানে, "গলা ছাড়িয়া গান গাহ।”