পাতা:কলিকাতা সেকালের ও একালের.djvu/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৮ কলিকাতা সেকালের ও একালের। রক্ষকারীলকান্তমনি ছিল। দত্ত-কল্প, নিমন্ত্রণক্ষেত্রে পক্ষপ করিবামার, উপরিস্থিত লোহিতবর্ণের সামিয়ান, ময়ুরপংখীর রং ধারণ করিল এবং চারিদিক হইতেই এক অপূৰ্ব্ব জ্যোতি নির্গত হইতে লাগিল। রাজা ইহার কারণ মুসন্ধান করায়, বাটীর মহিলাগণ, দত্ত-কন্যাকে রাজার নিকট লইয়ানিয়া, উক্ত নীলাযুক্ত অঙ্গুরী দেখান। রাজা নবকৃষ্ণ, অদুরীনিবদ্ধপ্রস্তরের বিস্তুর প্রশংসা করিলেন। কন্যা গৃহে আসিয়া, পিতাকে সমস্ত ঘটনা বলিলে, তিনি অল্প উপহারের সহিত, উক্ত অঙ্গুরীয়টাও রাজবাটীতে প্রেরণ করেন। ১৭৯৭ খ্ৰীষ্টাব্দের ২২শে নবেম্বর, শয়ন-গৃহের খট্রোপরি, নিদ্রিতাবস্থায় সকলের অলক্ষিতে, মহারাজ নবকৃষ্ণ মানবলীলা সম্বরণ করিয়াছিলেন। লে কালে গঙ্গাতীরস্থ হইয়া মৃত্যু না হইলে, লোকে তাছাকে অপঘাত মৃত্যু বলিরাই বিবেচনা করিত। সজ্ঞানে, গঙ্গায় ত্রিরাত্রবাস করিয়া, নাভিদেশ পর্যাৰ গঙ্গাজলে ডুবাইয়া, "গঙ্গানারায়ণ-ব্রহ্ম" জপ করিতে করিতে, হরিনামোচ্চার করিয়া যে মৃত্যু—তাহাই সেকালের হিন্দুরা বাসনা করিতেন। সুতরাং রাজার মৃত্যুতে, সাধারণ লোকে একটু কাণাযুষা করিতে থাকে। চূড়ামণি দত্তের পীড়া সাংঘাতিক আকার ধারণ করিবামাত্ৰই, তিনি বহুসংখ্যক ঢুলি আনাইয়া, নিজে একখানি রৌপ্যের চতুর্দোলে বসিয়া, গঙ্গাযাত্রায় চলি লেন। অগ্রপশ্চাৎ—অসংখ্য লোহিত-বর্ণের পতাকা, দলে দলে নগরকীৰ্ত্তন! চতুৰ্দোলটা—নানা রকমে সাজান। নামাবলীর চন্দ্ৰাতপ, তুলসীমালার ঝালর, চারিদিকে তুলসীগাছ, আর তার মধ্যে চূড়ামণি দত্ত–মাসন করিয়া বসিয়া আছেন। র্তাহার সৰ্ব্বাঙ্গে হরিমামের ছাপ, পরিধানে রক্তবর্ণের চেলী, পৃষ্ঠে নামাবলী ও গলায় এবং হাতে জপমালা। অগ্রে ঢুলিরা “চুড়া যায় যম জিন তে” এইবোল বাজাইতে লাগিল। কীৰ্ত্তনীয়ারা গাহিতে লাগিল— “আয়রে আয়—নগরবাসী! দেখবি যদি আয় । জগৎ জিনিয়া চুড়া—যম জিনিতে যায়। যম জিনিতে যায়রে চুড়া—যম জিনিতে যায়। জপ-তপ কর, কিন্তু মরিতে জানিলে হয় ।” রাজবাটার সম্মুখে দাড়াইয়া, এই গান গাহিবার পর, চূড়ামণি দত্ত সদলবলে গঙ্গার দিকে অগ্রসর হইলেন। রাজবাটীর লোকে, চুড়ামণি বায়ুর এই কঠোর-বিন্ধপে বড়ই মৰ্ম্মাহত হইলেন । কয়েক দিন গঙ্গাবাস করিয়া, চুড়ামণি দত্ত; পরিশেষে সজ্ঞানে গঙ্গালাজ্ব করিলেন। • এদিকে আবার নূতন বিভ্রাট উপস্থিত । মহাসমারোহে, চুড়ামণি দত্ত্বের