পাতা:কাব্যের কথা - চিত্তরঞ্জন দাশ.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙ্গলার গীতিকবিতা O ইন্দ্ৰিয়ের মধ্যেই শুদ্ধি, ভোগ ও ভুক্তি প্ৰতিষ্ঠিত। এ ইন্দ্ৰিয় ভাগবতভোগের ইন্দ্ৰিয় । বাঙ্গলার কবি সাধক, সেই ভোগে আত্মস্থ শুদ্ধির মধ্যে ভুক্তিকে সে প্ৰাণে প্ৰাণে অনুভব করে, মৰ্ম্মে মৰ্ম্মে আত্মায় আত্মায় রমণ করে,-এ ভোগ ভাগবত-ভোগ । বাঙ্গলার গীতিকবিতার মৰ্ম্মে মৰ্ম্মে এই ভোগের পরিচয় পাওয়া যায়। খৃশ্চান পাদরীর কাছে বাঙ্গলার ইন্দ্ৰিয়চাঞ্চল্যের কথা ও পাপরোধের কথা অনেক দিন হইতে শুনিয়া আসিতেছি। কিন্তু তাহ বলিয়া কি আমরা আমাদের আদর্শ ভুলিয়া, প্রতীচ্যের রঙিন খোলসে পড়িয়া, নিজের আত্মাকে অস্বীকার করিয়া সাহিত্য ও ধৰ্ম্মে আত্মহত্যার গৌরব অর্জন করিব ? আজিকালিকার দিনেও এ সব অলীক খৃশ্চানী নীতিকথার ন্যাকামীতে যাহারা ইন্দ্ৰিয়ের ভোগকে অশুদ্ধ করিয়া তুলিতে চায়, তাহারা, বাস্তবিকই কৃপার পাত্র। বাঙ্গলার বুকের উপর দিয়া অনেক ঝড় বহিয়া গেছে ; ধৰ্ম্মের নামে অধৰ্ম্মের অত্যাচার-সমাজরক্ষার নামে হিংসার অত্যাচারি-মানুষের উপর মানুষ যত প্ৰকার অত্যাচার করিতে পারে, সব হইয়া গেছে। সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্গলার রূপ, কত রঙের বিচিত্ৰতায় বদল হইয়া গিয়াছে। কত কবি জন্মিয়াছে, কত অকবি জন্মিয়াছে ; গত কয় ? শতাব্দীর উপর দিয়া কত কাঞ্চা, কত ব্যাত্যা, কত বিরোধ ও বিদ্রোহের অগ্নিতে সমাজ, মানুষও ধৰ্ম্মের আবৰ্ত্তন, বিবৰ্ত্তন ও আলোড়ন হইয়াছে ; কিন্তু তাহারই মধ্যে বাঙ্গলার যে শান্তি, পর্ণকুটীরে বসিয়া বিশ্বসৃষ্টিকে করতলস্থ আমলকৱৎ ধরিয়া রাখিয়াছিল, সে শক্তি-সে। সামর্থ্য হারাইল কেন ? সে আদর্শ কেমন করিয়া এই ফেরঙ্গ-যুগ নষ্ট করিল, তাহাই ভাবিবার কথা। চণ্ডিদাস যে ব্ৰজপ্ৰদীপের প্রদীপ জালিয়াছেন, সেই প্ৰদীপ আবার জালাইতে হইবে । কত বিপদ, কত সংঘাত ও বিপ্লবের মধ্যেও চণ্ডিদাস ও শ্ৰীচৈতন্য কেমন করিয়া বাঙ্গলার পরিপূর্ণ রস-মূৰ্ত্তিটিকে