পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কন্‌গ্রেস
৩৭৩

৩৭৩ প্রতি ভরসাকে, প্রচার করলে অহিংস্র সাধনাকেই নির্ভীক বীরের সাধনারূপে। নব জীবনের তপস্যার সেই প্রথম পর্ব আজও সম্পূর্ণ হয় নি, আজও এ রয়েছে তারই হাতে যিনি একে প্রবর্তিত করেছেন। শিবের তপোভূমিতে নন্দী দাঁড়িয়ে ছিলেন ওষ্ঠাধরে তর্জনী তুলে, কেননা তপস্যা তখনো শেষ হয় নি— বাইরের অভিঘাতে তাকে ভাঙতে গিয়ে অগ্নিকাণ্ড হয়েছিল।

 এই তো গেল এক পক্ষের কথা, অপর পক্ষের সম্বন্ধেও ভাবনার কারণ প্রবল হয়ে উঠেছে। কন্‌গ্রেস যতদিন আপন পরিণতির আরম্ভ-যুগে ছিল ততদিন ভিতর দিক থেকে তার আশঙ্কার বিষয় অল্পই ছিল। এখন সে প্রভূত শক্তি ও খ্যাতি সঞ্চয় করেছে, শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে স্বীকার করে নিয়েছে সমস্ত পৃথিবী। সে কালের কন্‌গ্রেস যে রাজদরবারের রুদ্ধ দ্বারে বৃথা মাথা খোঁড়াখুঁড়ি করে মরত আজ সেই দরবারে তার সম্মান অবারিত, এমন-কি, সেই দরবার কনগ্রেসের সঙ্গে আপস করতে কুণ্ঠা বোধ করে। কিন্তু মনু বলেছেন, সম্মানকে বিষের মতো জানবে। পৃথিবীতে যে দেশেই যে-কোনো বিভাগেই ক্ষমতা অতিপ্রভূত হয়ে সঞ্চিত হয়ে ওঠে সেখানই সে ভিতরে ভিতরে নিজের মারণবিষ উদ্ভাবিত করে। ইম্পিরিয়ালিজ্‌ম বললা, ফাসিজ্‌ম বললা, অন্তরে অন্তরে নিজের বিনাশ নিজেই সৃষ্টি করে চলেছে। কন্‌গ্রেসেরও অন্তঃসঞ্চিত ক্ষমতার তাপ হয়তো তার অস্বাস্থ্যের কারণ হয়ে উঠেছে বলে সন্দেহ করি। যাঁরা এর কেন্দ্রস্থলে এই শক্তিকে বিশিষ্ট ভাবে অধিকার করে আছেন, সংকটের সময় তাদের ধৈর্য্যচ্যুতি হয়েছে, বিচারবুদ্ধি সোজা পথে চলে নি। পরস্পরের প্রতি যে শ্রদ্ধা ও সৌজন্য— যে বৈধতা রক্ষা করলে যথার্থ ভাবে কন্‌গ্রেসের বল ও সম্মান রক্ষা হত, তার ব্যভিচার ঘটতে দেখা গেছে; এই ব্যবহার-বিকৃতির মূলে আছে শক্তিস্পর্ধার প্রভাব। খৃস্টান শাস্ত্রে বলে, স্ফীতকায়া সম্পদের পক্ষে স্বর্গরাজ্যের প্রবেশপথ সংকীর্ণ।