পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৩৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কন্‌গ্রেস
৩৭৫

ভারতবর্ষে এক প্রদেশের সঙ্গে আর-এক প্রদেশের বিচ্ছেদের সাংঘাতিক লক্ষণ নানা আকারেই থেকে থেকে প্রকাশ পাচ্ছে। ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমানের অনৈক্য শোচনীয় এবং ভয়াবহ সে কথা বলা বাহুল্য। যে বিচ্ছেদের বাহন স্বয়ং ধর্মমত তার মতো দুর্লঙ্ঘ্য আর-কিছু হতে পারে। কিন্তু এক প্রদেশের সঙ্গে আর-এক প্রদেশের যে আত্মীয়বুদ্ধির ক্ষীণতা তার কারণ পরস্পরের মধ্যে পরিচয়ের অভাব ও আচারের পার্থক্য। এই দুর্ভাগ্য ভারতবর্ষে আচার ও ধর্ম এক সিংহাসনের শরিক হয়ে মানুষের বুদ্ধিকে আবিল করে রেখেছে। যে দেশের আচার অন্ধজিদ-ওয়ালা নয়, যে দেশের ধর্মভেদ সামাজিক জীবনকে খণ্ড খণ্ড করে নি, সেই দেশে রাষ্ট্রিক ঐক্য স্বতঃই সম্ভবপর হয়েছে। আমাদের দেশে কন্‌গ্রেস সেই সাধারণ সামাজিক ঐক্যের ভিতর থেকে আপনি সজীব ভাবে বেড়ে ওঠে নি। তাকে স্থাপন করা হয়েছে এমন একটা সামাজিক অনৈক্যের উপরে, যে অনৈক্য প্রত্যেক পাঁচ-দশ ক্রোশ অন্তর অতলস্পর্শ গর্ত খুঁড়ে রেখেছে। এবং সেই গর্তগুলোকে দিনরাত আগলে রয়েছে ধর্মনামধারী রক্ষক-দল।

 কারণ যাই হোক, প্রদেশে প্রদেশে জোড় মেলে নি। মনে পড়ছে আমার কোনো-এক লেখায় ছিল, যে জীর্ণ গাড়ির চাকাগুলো বিশ্লিষ্ট, মড় মড় ঢল্‌ঢল্‌ করে যার কোচ্‌বাক্স, জোয়ালটা খসে পড়বার মুখে, তাকে যতক্ষণ দড়ি দিয়ে বেঁধেসেঁধে আস্তাবলে রাখা হয় ততক্ষণ তার অংশ-প্রত্যংশের মধ্যে ঐক্য কল্পনা করে সন্তোষ প্রকাশ করতে পারি, কিন্তু যেই ঘোড়া জুতে তাকে রাস্তায় বের করা হয় অমনি তার আত্মবিদ্রোহ মুখর হয়ে ওঠে।

 ভারতবর্ষের মুক্তিযাত্রাপথের রথখানাকে আজ কন্‌গ্রেস টেনে রাস্তায় বের করেছে। পলিটিকসের-দড়ি-বাঁধা অবস্থায় চলতে যখন শুরু করলে তখন বার বারে দেখা গেল তার এক অংশের সঙ্গে আর-এক অংশের আত্মীয়তার মিল নেই। অবস্থাটা যখন তখন কন্‌গ্রেস-কর্তৃপক্ষদের অত্যন্ত