বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যা গতিস্ত্বৎ প্রপন্নানাং সা মে ভূয়ৎ তদর্চ্চনাৎ।

 মাদ্রীর বচন শুনি বলে নৃপবর।
 মম চিত্তে এই কথা জাগে নিরন্তর।।
 তোমারে প্রকাশ আমি তেঁই নাহি করি।
 শুন কি না শুন তুমি হও ধর্ম্মনারী।।
 এখন আপনি তুমি কহিলা আমারে।
 তোমার কারণে আমি কহিব কুন্তীরে।।
 মম বাক্য কুন্তী কভু না করিবে আন।
 মাদ্রীরে কহিয়া রাজা যান কুন্তীস্থান।।
 কুন্তীরে একান্তে পেয়ে কহে নৃপতি।
 কূলের কল্যান হেতু কহি শুন সতী।।
 ইন্দ্রত্ব পাইয়া ইন্দ্র নিত্য যজ্ঞ করে।
 যশের কারণে আর শাস্ত্র অনুসারে।।
 বেদে তপে পারগ হইয়া দ্বিজগণ।
 তথাপি করেন তাঁরা দ্বিজের সেবন।।
 সেই হেতু কুন্তী আমি কহি যে তোমারে।
 মাদ্রীরে উদ্ধার কর এ ভব সংসারে।।
 মাদ্রীর বংশের হেতু করহ উপায়।
 তার পুত্র হৈলে হবে এ পুত্র সহায়।।
 এতেক শুনিয়া কুন্তী কহিল রাজায়।
 একবার দিব মন্ত্র তোমার আজ্ঞায়।।
 মাদ্রীকে ডাকিয়া তবে কুন্তী পাণ্ডুপ্রিয়া।
 মন্ত্র বলে দিল তারে প্রসন্ন হইয়া।।
 একবার দিতে পারি বলেন বচন।
 চিন্তিত হইয়া মাদ্রী ভাবে মনে মন।।
 একবার বিনা কুন্তী না দিবেক আর।
 কি উপায় হবে মম অধিক কুমার।।
 অশ্বিনীকুমারদ্বয়ে করিল স্মরণ।
 মন্ত্রের প্রভাবে দোঁহে আইল ততক্ষণ।।
 তাদের ঔরসে গর্ভ হইল সঞ্চার।
 প্রসবিল মাদ্রীদেবী যুগল কুমার।।
 জন্মমাত্র শুনি শব্দ আকাশ উপরে।
 রূপেগুনে শোভা দোঁহে করিবেক নরে।।
 হেনমতে ক্রমে পঞ্চ নন্দন হইল।
 পর্ব্বতনিবাসী ঋষি আসি নাম দিল।।
 জ্যেষ্ঠ পুত্র নাম তার হৈল যুধিষ্ঠির।
 ভয়ঙ্কর মূর্ত্তি সেই হ'ল ভীম-বীর।।
 তৃতীয় অর্জ্জুন নাম থুইল ঋষিগণ।
 চতুর্থ নকুল নাম মাদ্রীর নন্দন।।
 সহদেব নাম থুইল কুমার পঞ্চম।
 মহাবীর্য্যবন্ত পঞ্চ সিংহের বিক্রম।।
 পঞ্চ পুত্র নৃপতির দেখিতে সুন্দর।
 উজ্জ্বল করিল শতশৃঙ্গ গিরিবর।।
 পুত্র নিরখিয়া রাজা হরিষ অন্তর।
 হরষিত কুন্তী মাদ্রী দেখিয়া কুমার।।
 পুত্র সঙ্গ তিনজন তিলেক না ছাড়ে।
 ক্ষণেক না করে রাজা নয়নের আড়ে।।
 হেনমতে পঞ্চ পুত্র করেন পালন।
 একদিন কুন্তী প্রতি বলেন রাজন।।
 পুত্রসম সুখ নাহি সংসার ভিতরে।
 বঞ্চিত সকল সুখ পুত্রহীন নরে।।
 রাজ্যবন্ত ধনবন্ত বিদ্যাবন্ত জন।
 পুত্র বিনা তার হয় সব অকারণ।।
 ইহকালে সুখদায়ী লোকেতে গৌরব।
 পরকালে নিস্তারয়ে নরক রৌরব।।
 ভাগ্যবন্ত ধৃতরাষ্ট্র শত-সূত-পিতা।
 সে কারণে কহি শুন ভোজের দুহিতা।।
 পুনরাপি মন্ত্র দেহ মদ্র নন্দিনীরে।
 বহু পুত্রে বহু সুখ হয় এ সংসারে।।
 শুনিয়া বলেন কুন্তী যুড়ি দুই কর।
 আর না কহিও আজ্ঞা শুন নৃপবর।।
 পরম কপটি মাদ্রী দেখহ আপনে।
 একবার বর সে পাইল মোর স্থানে।।
 তাহে জন্মাইল মাদ্রী যুগল নন্দনে।
 মাদ্রীরে আমার ভয় হয় সে কারণে।।
 কৃতাঞ্জলি করি আমি নিবেদি তোমারে।
 মাদ্রীর কারণে আর না কহ আমারে।।
 মৌন রহিল পাণ্ডু কুন্তীর বচনে।
 আর সুত বাঞ্ছা ত্যাগ করিলেন মনে।।
 পাণ্ডবের জন্মকথা অপূর্ব্ব কথন।
 স্ববাঞ্ছিত ফল লভে শুনে যেইজন।।