পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
১৪

উঠিয়া গিয়া দরজা খুলিয়া দিল। দ্বারের বাহিরে দাঁড়াইয়া নূতন-বিতাড়িতা ঝি শিবানীর মা। সুনীতির কাছে আসিয়া গলার স্বর নামাইয়া সে ফিস্ ফিস্ করিয়া কথা কহিল, বলিল, “মাইনেটা দেবে দিদিমণি? মাস কাবার ত আজ আটদিন হয়ে গেছে, বাড়ীউলি বড্ড তাগাদা করছে, দিয়ে দেবে?”

 সুনীতি যেন একটা পথ পাইল, বলিল, “তা’ দিচ্চি, তুই চলে গেলি কেন ভাই, জানিস্ তো বাবার কি অবস্থা, তোদের কি একটুও মায়া হয় না রে আমার ’পরে।”

 তার কথাগুলো শেষদিকে গাঢ় হইয়া কণ্ঠের মধ্যে জড়াইয়া আসিল। শিবানীর মা কহিল, “সে তো সবই জানি দিদি, কি করবো, আমি নিজে তো চলে যাইনি, শেষকালে ধাক্কা দিতে দিতে ‘বেরো মাগী, বেরো মাগী’ বলতে বলতে সদর রাস্তায় বার করে দিয়ে ফটক বন্ধ করে দিয়ে এলেন, আমি কি করবো বল? সত্যি বলছি, যে দিব্যি করতে বলো করতে পারি। সারারাতটা তোমার কথাই ভেবেছি। ঘুমুতে পারিনি তিলেকের জন্যেও।”

 সুনীতির আহতচিত্ত আর যেন আঘাত-ব্যথা সহিতে পারিতেছিল না, নিদারুণ গুমোটের পর এতটুকু হাওয়ার ছোঁয়াতেই তাই তার দু’ চোখ ফাটিয়া একরাশি উষ্ণ জলের ঝরণা ঝর ঝর করিয়া দু’গাল বহিয়া ঝরিয়া পড়িল। সে ব্যগ্র কাতরতার সহিত ঝিয়ের একটা হাত চাপিয়া ধরিল “আমি বড় একলা শিবুর-মা, তুমি আমার মুখ চাও, তুমি ফিরে এস ভাই, ফিরে এস।”

 এ-সব শ্রেণীর ভিতর স্বার্থান্ধতা যদিও খুবই প্রবল, তথাপি মানুষ মাত্রেরই মধ্যে সকলকারই একটা দুর্ব্বল স্থান আছে, দুর্ব্বল মুহূর্ত্তে সেখানে স্পর্শ লাগিলে তাকে এক মুহূর্ত্তেই উদারতর করিয়া তুলিতে তখন আর বাধে না। সে আজ যে মাহিনার ছুতা করিয়া আসিয়া-