পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RV8 州訊平 বরখাস্ত করবেন। তাতে অবশ্য কিছু আসে যায় না, আমার মত গুণী লোকের চাকরির ভাবনা নেই। তবে কি না, অনেক দিন আছি বলে জায়গাটার উপর মায়া পড়ে গেছে। মুনিবকে কিছু বলা বৃথা, কেননা, তিনি মুখ থাকতেও বোবা, চােখ থাকতেও কাণ। তাই তাঁকে কিছু না বলে যিনি এই মুনিবের মুনিব, র্তার, অর্থাৎ তার স্ত্রীর কাছে একখানি দরখাস্ত করেছি। শুনতে পাই আমাদের সাহেব মেমসাহেবের কথায় ওঠেন বসেন। এ কথায় বিশ্বাস হয়, কারণ এর স্ত্রী শুনেছি ভারি সুন্দরী-প্ৰায় তোমার মত। তারপর এই অপদার্থটা তার স্ত্রীর ভাগ্যেই খায়, শুধু ভাত নয়, মদও খায়, চুরুটিও খায়। ইনি বিদ্যের মধ্যে শিখেছেন ঐ দুটি। সে যাই হােক, এর গৃহিণীকে যে চিঠিখানি লিখেছি, সে একটা পড়বার মত জিনিস। আমার দুঃখ রইল। এই যে, সেখানি তোমার কাছে পাঠাতে পারলুম না। তার ভিতর সমান অংশে বীররস। আর করুণরস পূরে দিয়েছি, আর তার ভাষা একদম সীতার বনবাসের। শুনতে পাই, কত্রীঠাকুরাণী খুব ভাল লেখাপড়া জানেন। আমার এই চিঠি পড়েই তিনি বুঝতে পারবেন যে, তার স্বামী ও তোমার স্বামী এ দুজনের মধ্যে কে বেশি গুণী। আশা করছি, কাল তোমাকে দশ টাকা মাইনে বাড়ার সুখবর দিতে পারব। তোমারই প্ৰাণবন্ধু দাস।” চাটুয্যে সাহেব চিঠিখানি আদ্যোপােন্ত পড়ে ঈষৎ কাষ্ঠহাসি হেসে স্ত্রীকে বললেন- “এ চিঠি তোমার নয়, ভুল খামে পোরা হয়েছে।” বলা বাহুল্য, পত্রপাঠমাত্র প্রাণবন্ধুর বরখাস্তের হুকুম বেরল। চাটুয্যে সাহেব সব বরদাস্ত করতে পারেন, একমাত্র স্ত্রীর কাছে অপদস্থ হওয়া ছাড়া। কেননা, তিনিও ছিলেন প্ৰাণবন্ধুর জুড়ি, পত্নীগত-প্ৰাণ। এই চিঠিই হল প্রাণবন্ধু দাসের স্ত্রীর যথার্থ অদৃষ্ট লিপি, আর সে লিপি সংশোধনের কোনরূপ উপায় ছিল না, কেননা তা ছাপার অক্ষরে লেখা ।