পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চার-ইয়ারী-কথা ¢ ዓ তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি, প্ল্যাটফরমের রেলিংয়ের ওপরে বাস্তার ধারে একটি গাছে হেলান দিয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমে যে কেন আমি তাকে দেখতে পাইনি, তাই ভেবে আশ্চর্য হয়ে গেলুম, কেননা সে যে রংঙের কাপড় পরেছিল তা আধিক্রোশ দূর থেকে মানুষের চোখে পড়ে—একটি মিসূমিসে কালে গাউনের উপর একটি ডিগ্ৰডগে হলদে জ্যাকেট। সেদিনকে “রিণী” এক অপ্রত্যাশিত নতুন মূর্তিতে, আমাদের দেশের নববধূর মূর্তিতে দেখা দিয়েছিল। এই বাজবিদ্যুৎ দিয়ে গড় রমণীর মুখে আমি পূর্বে কখন লজ্জার চিন্স মাত্রও দেখতে পাইনি। কিন্তু সেদিন তার মুখে যে হাসি ঈষৎ ফুটে উঠেছিল, সে লজ্জার রক্তিম হাসি। সে চোখ তুলে আমার দিকে ভাল করে চাইতে পারছিল না। তার মুখখানি এত মিষ্টি দেখাচ্ছিল যে, আমি চােখ ভরে প্রাণভরে তাই দেখতে লাগলুম। আমি যদি কখনও তাকে ভালবেসে থাকি, ত সেই দিন সেই মুহূর্তে ! মানুষের সমস্ত মনটা যে এক মুহূৰ্ত্তে এমন রং ধরে উঠতে পারে, এ সত্যের পরিচয় আমি সেই দিন প্রথম পাই । ] ট্রেন B স্টেসনে বোধ হয় মিনিটখানেকের বেশি থামেনি, কিন্তু সেই এক মিনিট আমার কাছে অনন্তকাল হয়েছিল। তার মিনিট পাঁচেক পরে ট্রেন W স্টেসনে পৌঁছল। আমি সমূদ্রর ধারে একটি বড় হােটেলে গিয়ে উঠলুম। কেন জানিনে, হোটেলে পৌঁছেই আমার অগাধ শ্রান্তি বোধ হতে লাগল। আমি কাপড় ছেড়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লুম। এই একটি মাত্র দিন যখন আমি বিলোতে দিবানিদ্রা দিয়েছি, আর এমন ঘুম আমি জীবনে কখনও ঘুমাইনি। জেগে উঠে দেখি পাঁচটা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি কাপড় পরে নীচে এসে চ খেয়ে পদব্রজে B-র অভিমুখে যাত্রা করলুম। যখন সে গ্রামের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁচলুম, তখন প্রায় সাতটা বাজে ; তখনও আকাশে যথেষ্ট আলো ছিল। বিলেতে জানইত গ্রীষ্মকালের রাত্তির দিনের জের টেনে নিয়ে আসে ; সূর্য অস্ত গেলেও, তার পশ্চিম আলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাত্তিরের গায়ে জড়িয়ে থাকে। “রিণী” কোন পাড়ায় কোন বাড়ীতে س