পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀՑՀ গল্প-গ্রন্থাবলী সরেন বলিল, “তাকে এখন কি বাসায় পাবে ? সে তু আজ চলল রাইবেরেলী। সেখানে একটা চাকরি জটিয়েছে যে। এতক্ষণ বোধ হয় সে হাওড়া স্টেশনের পথে ।” তিন অবিলম্বে মেসের অন্যান্য লোকের মধ্যে কথাটা প্রচার হইয়া গেল। সন্ধ্যার পর সকলে আসিয়া সরেনের ঘরে জটলা আরম্ভ করিল। যোগেশবাব বলিলেন, “অতুলটা কি কোনও সত্রে জানতে পেরেছিল যে, কুন্দমালার মামা তোমাকে আজ দেখতে আসবেন ? জেনে শুনে ঐ রকম চালাকি খেলে গেল নাকি ?” শরৎ বলিল, “আমি তা তার পাশেই বসে ছিলাম, কিন্তু সে সময় তার মাখ-চোখ দেখে ত ওরকম আমার মনে হয়নি ভাই! বিশেষ, সে ত নিজে কোনও কথাই তোলেনি, —হঠাৎ খবরের কাগজ পড়ে শোনালে ত সতীশ —সতীশ, তুমিই পড়ে শোনালে না ?” সতীশ বলিল, “হ্যাঁ, আমিই ত পড়ে শোনালাম। কাগজখানা নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলাম, হঠাৎ ঐ প্যারাটা আমার চোখে পড়লো তারও ফার্ট হওয়ার জন্যে আনন্দভোজ শনিবারেই হচ্ছে এই কথা পড়ে আমার ভারি মজা লাগলো, তাই তোমাদের সেটা পড়ে শোনালাম।” বিপিন বলিল, “হয় ওৎলোটা জানতো, নয়, সত্যিই তার একটা ক্ষমতা আছে—ওকেই ত ক্লেয়ারভয়েলস বলে ।” উমাপদ বলিল, “যারা সাধনার খুব উচ্চ স্তরে উঠেছে, তাদের এ রকম ক্ষমতা জন্মে, তা স্বীকার করি। কিন্তু ওৎলোটা ত মহা নাস্তিক। মসলমানের রান্না মৃগী ভক্ষণ করে, ওর ওরকম ক্ষমতা থাকা আমি ত অসম্ভব বলেই মনে করি। নিশ্চয়ই সে জানতো ।” শরৎ বলিল, “জানতো কি না, সে সম্বন্ধে আমি কিছু বলছিনে অবশ্য, কিন্তু কোনকোনও মানষের স্বভাবতঃ ওরকম একটা আশ্চয্য ক্ষমতা থাকে, সেটা আমি জানি। আমি যখন প্রথম বছর কলকাতায় আসি, অস্ট্রেলিয়া থেকে একটা সাকাসের দল এসেছিল খেলা দেখাতে। তখন বড়দিনের ছটা। গড়ের মাঠে প্যান্ডাল খাটিয়ে তারা খেলা দেখাচ্ছিল। নানা রকম খেলা হবার পর, একটা খেলা দেখালে, তা একেবারে অস্তুত। এক ছড়ী মেম, বয়স এই আঠারো উনিশ, সে এসে বললে, "দশকদের মধ্যে যে কাউকে আমি ছয়েই, তার জন্মবার বলে দেবো। যদি আমার ভুল হয়, অনুগ্রহ করে তিনি যেন ললেন।’ এই বলে সে প্রথম সারি, দ্বিতীয় সারি, এক এক জনকে ছোঁয়, আর এক একটা বারের নাম বলে যায়, যেমন—শনিবার, বুধবার, মঙ্গলবার, শুক্রবার-এই রকম। একটি লোকও বললে না যে, না ঠিক হ’ল না, তোমার ভুল হয়েছে। আমি তৃতীয় সারিতে বসে ছিলাম, খালি ভাবছি, আমার জন্মবার ত সোমবার, দেখি ঠিক বলে কি না। ঐ রকম বলতে রলতে তৃতীয় সারিতে এসে, ছড়ী আমার দিকে চলে এল, আমাকে ছোঁবামাত্র বললে—সোমবার।" অনেকেই আশচষ্য হইয়া বলিল, “অ্যাঁ, বল কি ? নিজে তুমি দেখেছ—” শরৎ বলিল, “নিজে নয় ত কি প্রকসিতে ?—পাঁচটি টাকা দিয়ে টিকিট কিনে আমি ঐ তামাসা দেখতে গিয়েছিলাম। আমার মনে হ’ল, আমার টাকা খরচ সার্থক হয়েছে। তার পর আরও মজা শোন। তৃতীয় সারি শেষ করে ছড়ী ফিরে গেল। তার পর বললে, ‘প্রত্যেক লোককে ছয়ে, কার পকেটে কি আছে, আমি তা বলে দিতে পারি।" এই বলে আবার প্রথম সারি থেকে আরম্ভ করলে। এক এক জনকে ছোঁয় আর বলে— রামাল, চাবি, পেন্সিল, নসির ডিপে ইত্যাদি। জনপ্রাণী কেউ প্রতিবাদ করলে না।