পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বীরবলের গল্প 8S& ছিলেন, এই পরোয়ানা পাইয়া তিনি ত মাথায় হাত দিয়া বসিয়া পড়িলেন। তাই ত’ একে এই টানাটানি-এক মাস পরে এক লক্ষ টাকা পাই কোথা ? কি ফেসাদেই পুড়া रंशज, झि झि !” " " লোকমুখে বীরবলও এই ব্যাপার অবগত হইলেন। তখন তিনি চাপকান পাগড়ী ইত্যাদি পরিধান করিয়া, রাজবাড়ী গিয়া, রাজার সহিত দশন প্রাথনা করিলেন। রাজার নিকট গিয়া তাঁহাকে আশীব্বাদ করিয়া বলিলেন, “মহারাজ, শনিলাম আপনি নাকি মহা মেড়া-সমস্যায় পড়িয়ছেন ?” "হাঁ, সমস্যা নয় ত’ আর কি ?” “আমি আপনার একজন দীন প্রজা। যদি আদেশ করেন আমি সমস্যার সমাধান করিয়া দিতে পারি।" “তাহা হইলে ত’ বাঁচ। কি সমাধান ? বল বল!” “মহারাজের চিড়িয়াখানা আছে, তাহাতে কতকগুলি বড় বড় খাঁচায় বড় বড় বাঘ আবদ্ধ আছে দেখিয়ছি। সেই একটা বাঘের খাঁচার কাছে মেড়াটাকে বধিবার হরকুম দিন। এক মাস ও মেড়া সেইখানেই বাঁধা থাকিবে । চাাঁর সের কেন, যত খাইতে পারে দানা উহাকে দিবার আদেশ করিয়া রাখনে ৷” 哆 এই পরামশ অনুসারেই কাৰ্য্য হইল। মাসান্তে রাজকর্মচারিগণ সব সব জিমার মেড়া লইয়া রাজধানীতে প্রত্যাবত্তন করিল। মেড়াগলি একে একে আবার ওজন করা হইল। সেগুলির ওজন কাহারও দশ সের, কাহারও বিশ সের, কাহারও এক মণ বাড়িয়া গিয়াছে। কেবল একটি মেড়া, অত্যন্ত শীণ হইয়া পড়িয়াছে—তাহার ওজন প্রায় অর্থেক কমিয়া গিয়াছে। বাদশাহ কর্মচারীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হে, এ মেড়াটি এমন কাহিল হইয়া গেল কেন ? ইহাকে চারি সের দানা কি রোজ দেওয়া হইত না ?” কমচারী হাতযোড় করিয়া বলিল, "চারি সের কেন জাঁহাপনা ৫।৬ সের দানা ইহাকে প্রত্যহ দেওয়া হইত। কিন্তু তাহার সিকি ভাগও এ খাইত না। খাইবে কি—ইহাকে একটা মস্ত বাঘের খাঁচার সামনে এই এক মাস বধিয়া রাখা হইয়াছিল। বাঘটা যখন তখন ইহাকে দেখিয়া তজন করিত, লোলুপ নেয়ে ইহার পানে চাহিয়া, জিভ বাহির করত, সে জিভ দিয়া টস টস করিয়া লালা বরিত। মেড়া দানা খাইবে কি, ভয়েই কাঠ হইয়া থাকত। আতঙ্কে আতঙ্কে দিন দিনই রোগা হইতে লাগিল ।” বাদশাহ বলিলেন, “কে এ রকম করতে সে রাজাকে পরামর্শ দিয়ছিল জান ?” “শনিয়াছি তাঁহার একজন ব্রাহ্মণ* প্রজা তাঁহাকে ঐরপে পরামর্শ দিয়াছিল।” ইহা শনিয়া বাদশাহ মনে মনে বলিলেন, সে ব্রাহ্মণ আর কেহ নয়, সেই বীরবল ! নহিলে এত বৃদ্ধি কার? o বাদশাহ তৎক্ষণাৎ, সেই রাজ্যে একজন দক্ষ গুপ্তচরকে পঠাইয়া দিলেন। চর ফিরিয়া আসিয়া বলিল, “বীরবলই নাম ভাঁড়াইয়া সেখানে বাস করিতেছেন। তিনিই রাজাকে পরামর্শ দিয়া মেড়াকে বাঘের খাঁচার সম্মখে বাঁধাইয়াছিলেন।” বাদশাহ বলিলেন—“সে আমি আগেই বঝিয়াছি।” তার পর বাদশাহ হাতী ঘোড়া সৈন্য সামন্ত লইয়া রাজোচিত সমারোহে সেই রাজ্যে যারা করিলেন এবং এবং ক্ষমা প্রার্থনা করিয়া, মহা সমাদরে বীরবলকে ফিরাইয়া আনিলেন । বলা বাহুল্য, বীরবল তাঁহার রাজ্য ও ধনসম্পত্তি সমস্তই ফিরিয়া পাইলেন।

  • প্রবাদ এই যে, রাজা বীরবল কান্যকুব্জ ব্রাহ্মণ ছিলেন।