পাতা:গীতবিতান বার্ষিকী (মাঘ, ১৩৫০).pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব-স্থতি ৫১ কি হৃদয়গ্ৰাহী তার সুর ! পরে শুনেছি এ গানের সুরের নাম পিলু’। তারপরে পিলু-গান আরও অনেক শুনেছি। সেই অবধি আমি গানের ভক্ত হয়ে উঠি । তারপর কৃষ্ণনগরে আমার এক সহপাঠী‘বন্ধু'-ৰলে একাট ছোকরার কাছে কতকগুলি গান শেখে । ‘বন্ধু'র ছিল অতি চমৎকার গল। । তার আওয়াজ যেমনি মিষ্টি তেমনি ধরাজ ! তার যে-গানগুলি শুনি, তার ভিতর ছিল একটি হাদীর, একটি বাগেশ্রী আর একটি বসত-বাহার বা সোহিনী। সেইসময়ে অনেক ভারি ভারি গানের যাত্রার গানও শুনি এবং বিস্তামুন্দরের যাত্রায় একটি টঙা কিম্ব, ভুংরী শুনি। সেটি আমার চমৎকার লেগেছিল। আর তার নকল করতে গিয়ে আমি আবিস্কার করি যে, আমার গলায়ও মিহি তান আছে। বাড়ীতে একটি টেব লু-হারমোনিয়ম ছিল। দাদা সেটি বাজিয়ে গান গাইতেন। তার। একটি গানের প্রথম লাইন আযার মনে আছে :- ওপাড়াতে জুধ যোগাতে যাইগো আমার বেল হল। ছঃখের বিষয়, দাদার ফুর-লারের কান ছিলনা, এবং গানের গলা মোটেই ছিলনা । বাড়ীথেকে হারমোনিয়ম বিদায় হবার পর দাদা আর কখনো সঙ্গীতচর্চা করেননি। তারপরে যখন একটি পিয়ানো এল, তখন দিদি এক মিশনারি মেমের কাছে পিয়ানো শিক্ষা সুরু করলেন। তিনি Raindrops Patterনামক একটি বিলিতীমুর একআঙুল দিয়ে বাজাবার চেষ্টা করতেন । তার পিয়ানোশিক্ষা আযাদের কাছে একটা নিতান্ত উৎপাত বলে মনে হত । সুখের বিষয় এই যে, দিদির ইংরিজী বাজনাশিক্ষা এরবেশি আর এগলো না । যিশনারিরা তাকে জবাব দিলে, আমরাও বাচলুম। এইসময়ে ‘নেত্য-বলে একটি বৃদ্ধ৷ ঢপ ওয়ালী মধ্যেমধ্যে মা’র কাছে এসে তাকে গান শোনাত । কি ভরাট তার গলা ! সে গাইত ভারি ভারি রাগ। অধিকাংশই ভাষা বিষয়ের গান। সে ছিল জাতে হাড়ি ; কিন্তু আজীবন সঙ্গীতশিক্ষ। আর গান অত্যাস। করে’ এ বৃদ্ধবয়সেও আযাদের মুগ্ধ করে’ দিত। এরপরে আমি যখন সাড়ে-তেরো বছর বয়সে কলকাতায় পড়তে আসি, তখন। আবিষ্কার করে আশ্চৰ্য্য হলুম যে, কলকাতায় ভদ্রসন্তানরা একদম সঙ্গীতদুট। আমি যখন হেয়ার-ইস্কুলে পড়ি, তখন একটি ছোকরার যুখে “প্রেমের কথা আর বোলোনা, আর তুলোনা" —এই গানটি শুনি। এর সুর কি জিজ্ঞাসা করায়, সে বলে “ইটালিয়ান ঝি বিট" । অবখ্য আমি তার উত্তরে বলি যে, ঝি বিট জানি, বি বি’ট খাম্বাজ জানি, কিন্তু তুমি যা গাইলে তার মধ্যে ঝি ঝিট কোথায়, তা ধরতে পারছিনে। বোধহয় ইটালিতে গেলে তা জানতে পাব । তখন “আয়লো অলি কুসুম তুলি ভরিয়ে ডালা-নামক একটি গান কলকাতায় খুব প্রচলিত ছিল। পে-গান ইস্কুলের ছেলের গাইত, আর রাস্তার গাড়োয়ানেরা গাইত। আমার কানে এ গানের কথা ও সুর ঝাটা যাবৃত।