পথ-হারা।
বাবুর নিকট উপস্থিত করা হইল, মিত্র মহাশয় ভাবিয়াছিলেন যে তাঁহার প্রস্তাব সাগ্রহে গৃহীত হইবে, সেইজন্য তিনি বিবাহ সম্বন্ধে একপ্রকার নিশ্চিন্ত হইয়াছিলেন। ঘটক যখন ফিরিয়া আসিয়া বলিল যে, প্রবোধ ঘোষ মিত্র-বংশে কন্যাদান করিবে না, তখন বিস্ময়ে তাঁহার বাক্রোধ হইয়া গেল। সুরমার মাতা কিছুতেই স্বামীর মত করাইতে পারিলেন না, প্রবোধ ঘোষ অপমান ভুলিতে পারে নাই, প্রতিজ্ঞা করিয়া বসিয়াছিল যে সদাশিব মিত্রের পুত্রকে কন্যা-দান করিবে না। কলিকাতায় মণিলাল সব কথা শুনিয়াছিল। সে স্থির করিল যে দৌলতপুর গ্রামে আর যাইবে না।
অনেক অনুসন্ধানের পরে সুরমার বিবাহের সম্বন্ধ স্থির হইল, দূর দেশের একজন ধনবান জমিদার যৌবনের শেষে পত্নীহারা হইয়া একটি বয়স্থা সুন্দরী পাত্রীর অনুসন্ধান করিতেছেন, সুরমাকে দেখিয়া তাহার পছন্দ হইল। শুভদিন দেখিয়া সুরমার বিবাহ হইয়া গেল, লজায়, ঘৃণায়, অভিমানে মিত্রজা মরমে মরিয়া গেলেন। যথাসময়ে মণিলাল সুরমার বিবাহের কথা শুনিল, শুনিয়া পাঠে দ্বিগুণ মনঃসংযোগ করিল, সদাশিব মিত্র ভাবিলেন পুত্রের জীবনের ছায়া কাটিয়া গেল।
সুরমা এখন ধনীর গৃহিণী, পিত্রালয়ে আসিবার অবসর পায় না, আসিলেও দুএকদিন থাকিয়া চলিয়া যায়। প্রবোধ ঘোষ ভদ্রাসনখানি এক ব্রাহ্মণকে দান করিয়া কাশীবাসের চেষ্টায় আছেন। তিনি বলিয়া থাকেন যে সুরমাকে এমন ঘরে দিয়াছেন যে তাহার পক্ষে পিতৃগৃহে আসা অসম্ভব, সুতরাং তিনি কাশীবাস করিলেও সে কখনও তাঁহার অভাব অনুভব করিবে না।