পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আহ্বান।

নিজস্ব; সেই জন্যই সে দর্শন পাইয়াছে। বিনা আয়াসে, বিনা চেষ্টায় শ্যামসুন্দর তাহার নিকটে আসিবে, ইহাই তাহার বিশ্বাস।

 সেই চক্ষু দুটি, সেই ভ্রূযুগল, যে মুখখানিতে আছে, তাহা যে তাহার, নিজস্ব, তাহার জন্য সাধনার, আরাধনার আবশ্যক নাই—দুঃখ, কষ্ট, তপস্যার প্রয়োজন নাই—সে তাহার নিজের। সে তাহার সম্পূর্ণ অধিকারী, এই ভাবিয়া ইন্দু অধিকারগর্ব্বে গর্ব্বিতা হইত। তাহার ক্ষুদ্র সইটি তাহার চারিহাত দীর্ঘ স্বামিটীকে অঞ্চলে বাঁধিয়া কেমন করিয়া ঘুরিয়া বেড়ায়? তাহার নিজস্ব বলিয়াই ত! সে না হয় তাহার সইয়ের মত অত সৌভাগ্যবতী নহে; তাই বলিয়া কি তাহাকে একবার দেখিবার জন্য চেষ্টা করিতে হইবে? কখনই নহে। ইন্দু মন বাঁধিয়া বসিয়া রহিল। দিনের পর দিন যায় শ্যামসুন্দর ত আসে না।

 বাণীর গান শুনিবার জন্য ইন্দু উৎকর্ণ হইয়া থাকিত। পলে পলে তাহার মনে হইত ঐ বুঝি বনরাজি কম্পিত হইয়া উঠিল, বাঁশীর ঝঙ্কারে জগৎ উন্মত্ত হইয়া উঠিল, ঐ বুঝি সে আসিল; রাঙা চরণ দুখানি দূর্ব্বাক্ষেত্রের উপর দিয়া নাচিয়া গেল। যখন সে দেখিত কিছুই না, তখন সে বড় হতাশ হইয়া পড়িত। একদিন সত্য সত্যই বাঁশী বাজিল। ইন্দু প্রথমে বিশ্বাস করে নাই। ক্রমে স্বর স্পষ্ট হইয়া উঠিল—

“আজ কোকিলে গেয়েছে কুহু মুহুর্মুহু
আজ কাননে ঐ বাঁশী বাজে;
মান করে থাকা আজ কি সাজে।”—

 বাঁশী অন্যদিনের মত আজ কথায় গান ধরিয়াছে—

৬৩