পাতা:গ্রীক ও হিন্দু - প্রফুল্লচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯২ গ্রীক ও হিন্দু। কৰ্ম্ম দ্বিবিধ, এক সকাম ও অপর নিষ্কাম । সকাম কৰ্ম্মই সুকৃতি বা দুষ্কৃতির আকার ধারণ করিয়া থাকে এবং তজ্জন্য ভোগাভোগ ঘটনা হয়। এই সকাম কৰ্ম্মের মূলস্বরূপ কামনার দ্বিবিধ প্রকার ভেদে দ্বিবিধ পরিণাম ; যে কামনা কাৰ্য্যতঃ কৰ্ম্মরূপে পরিণত হইয়াছে, তাহার পরিণাম ভোগ ; যে কামনা তাহা হইতে না পাওয়ায় অতৃপ্ত রহিয়াছে, তাহার পরিণাম কামনানুরূপ ক্রিয়াপ্রদ পুনর্জন্ম। এই শেষোক্ত কামনাকেই পুনর্জন্মপ্রষত্তক কৰ্ম্মস্বত্র (৪৮) বলা যায়। কামনার উত্তমাধমতা অনুসারে, পুনর্জন্মও উত্তম বা অধম যোনিতে সংঘটিত হইয়া থাকে। কৰ্ম্মজন্য যে ভোগ, তাহ যে কেবল পরলোকে ভোগ্য তাহা নহে । কোন কোন ভোগ ইহলোকেও হইয়া থাকে। কাৰ্য্যকারণপরম্পরার উত্তেজনায় তীব্রতা বা মৃত্নতা অনুসারে, যে ভোগ শীঘ্র ঘটবার তাহ। ইহলোকে ভোগ হইয়া যায় এবং যাহা সেরূপ শীঘ্র না ঘটে, তাহ কাজেই লোকান্তরে ভোগ্য হয়। কৰ্ম্মের প্রকৃতি অনুসারে, উচ্চ বা অধম যে লোকে বউক, ভোগ শেষ হইয়া গেলে, জীব তখন কৰ্ম্মস্বত্র অনুসারে যথাযোগ্য দেহ মন অবলম্বনে নূতন জন্ম পরিগ্রহ করিয়া থাকে। কৰ্ম্মসকলও যে কেবল ভুক্ত হইয়াই ক্ষান্ত হয়, তাহা নহে ; (৪৮) ফলতঃ ধরিতে গেলে, হিন্দূতত্ত্ববিদ্যার মূলস্বত্রই কামনা । অবিদ্যামোহে আত্মার যে কিছু কামনা উৎপন্ন হয়, সেই কামনা জষ্ঠই জীবত্ব ও জড়স্বষ্টি । কামনা জষ্ঠ আদি স্বাষ্ট মনঃ, উহাই "হিষণ্যগর্ভ ব্ৰহ্মা’ অবস্থা । মানসধৰ্ম্মে পুনঃ, উচ্চাধঃ উভয়মুখে, সেই কামনা যত বিভিন্ন প্রকারে প্রসারিত হয়, স্থল স্বষ্টিও সেইরূপ উত্তমাধমাদি নানা শ্রেণিভেদে, নানা বিভিন্ন আকারে উদয় হইতে থাকে। বোধ হয়, এই তত্বেরই রূপক অর্থে, পুরাণাদিতে "বিধাতার মানস-স্বাঃ” বলিয়া কথিত হইয়া থাকে ; অর্থাৎ বিধাতা যাহা কিছু স্বষ্টি করেন, তাহা সমস্তই ইচ্ছাস্থত্রে ও মানস-শক্তির প্রভাবে ।