পাতা:চন্দ্রলোকে যাত্রা - রাজেন্দ্রলাল আচার্য.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নূতন প্রস্তাব

 সম্মুখে সহসা বজ্র পড়িলে মানুষ যেরূপ স্তম্ভিত হয়, এই প্রস্তাব শুনিয়া সদস্যগণ সেইরূপ স্তম্ভিত হইয়া গেলেন। কিন্তু পরমুহূর্ত্তেই সেই সভাগৃহ ভেদ করিয়া এমন একটী উন্মত্ত আনন্দ-কোলাহল উত্থিত হইল যে, মনে হইল যেন সেই বিশাল মিলন-মন্দির তৎক্ষণাৎ ভাঙ্গিয়া পড়িবে। উহা কম্পিত হইতে লাগিল ৷

 সভাপতি বার্বিকেন পুনরায় কথা কহিতে চেষ্টা করিলেন, কিন্তু পারিলেন না। আরও কিছুক্ষণ অতিবাহিত হইয়া গেল! সভাতল কথঞ্চিৎ শান্ত-মূর্ত্তি ধরিল। সভাপতি তখন বলিলেন,—

 “বন্ধুগণ! আর দুই একটা কথা, তাহা হইলেই শেষ হয়। আমি বিশেষ অধ্যবসায়ের সহিত হিসাব করিয়া দেখিয়াছি, প্রতি সেকেণ্ডে দ্বাদশ সহস্র গজ যাইতে পারে এমন একটা গোলা চন্দ্রকে লক্ষ্য করিয়া ছুঁড়িতে পারিলেই উহা চন্দ্রলোকে পৌঁছিবে। আমি তাই সবিনয়ে প্রস্তাব করি আপনারা আপাততঃ কর্ম্মহীন বসিয়া না থাকিয়া এই সামান্য কার্য্যটীতে মনঃসংযোগ করুন।”

 সভাপতির প্রস্তাবটী সমিতির সদস্যদিগের হৃদয়ে তড়িৎ ছুটাইয়া দিল। চারিদিকে তখন জয়ধ্বনি করতালি, নৃত্য এবং উল্লম্ফন আরম্ভ হইল! সেই চঞ্চল, সংক্ষুব্ধ, ক্ষিপ্ত, দোদুল্যমান জনসমুদ্রের মধ্যে সভাপতি অটল অচলের ন্যায় দণ্ডায়মান রহিলেন! ইচ্ছা ছিল, আরও কিছু বলেন। কিন্তু সদ্যগণ তাহার অবসর দিল না— তাঁহার ঘণ্টা-নিনাদ কেহ গ্রাহ্যও করিল না। সকলে হর্ষোৎফুল্ল হইয়া মুহূর্ত্তে সভাপতিকে সবেগে স্কন্ধে তুলিয়া নৃত্য করিতে লাগিল। পরমুহূর্ত্তেই দেখা গেল, তিনি এক স্কন্ধ হইতে স্কন্ধান্তরে এবং তথা হইতে অন্য স্কন্ধে নিক্ষিপ্ত হইতেছেন!

১১