পাতা:চন্দ্রলোকে যাত্রা - রাজেন্দ্রলাল আচার্য.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চন্দ্রলোকে যাত্রা

 কাঠুরিয়া অঙ্গুলি নির্দ্দেশে বনের গভীর অংশ দেখাইল। ম্যাট্‌সনের হাত ধরিয়া টানিয়া লইয়া আর্দ্দান সেই দিকে ধাবিত হইলেন। তখনো কাননে অরুণের রক্তরাগ প্রবেশ করে নাই। তখনো তিমিরাবৃতা রজনীর অন্ধকার স্নেহালিঙ্গনে বৃক্ষশাখাদিগকে জড়াইয়া রাখিয়াছিল। সুদীর্ঘ ওক, পত্রবহুল তিন্তিড়ী, বৃহৎ ম্যাগ নোলিয়া প্রভৃতির উচ্চশির তখন অরুণ রাগে উজ্জ্বল হইতেছিল মাত্র। বৃক্ষে বৃক্ষে, শাখায় শাখায়, শাখায় পল্লবে, লতায় শাখায়, জড়াজড়ি, মিশা-মিশি করিয়া কাননের সেই অংশকে এতই নিবিড় ঘন করিয়াছিল যে দশ হস্ত মাত্র দূরে কেহ দণ্ডায়মান থাকিলেও সহসা দেখিবার উপায় ছিল না। স্থান হইতে স্থানান্তরে বনে বনে ঘুরিয়াও যখন বার্বিকেনকে দেখা গেল না, তখন আর্দ্দান্ কহিলেন,—“হয়ত বার্বিকেন্ দ্বৈরথ সমরের সঙ্কল্প ত্যাগ ক’রেছেন—বনে আসেন নাই।”

 গর্ব্বিত-কণ্ঠে একটু তিরস্কারের সুরে ম্যাট্‌সন্ কহিলেন,—“অসম্ভব! আমেরিকান্ কোনো দিন কথার খেলাপ করে না। তার যে কথা, সেই কাজ।”

 আর্দ্দান্ সে কথার উত্তর না দিয়া আবার অনুসন্ধান আরম্ভ করিলেন। উচ্চ-কণ্ঠে ডাকিতে লাগিলেন,—“বার্বিকেন! বার্বিকেন! নিকল্! নিকল্!” তাঁহার চীৎকার শুনিয়া পক্ষিগণ ইতস্ততঃ উড়িয়া বসিতে লাগিল। তাঁহারা উভয়ে আরও উচ্চ-কণ্ঠে ডাকিতে লাগিলেন। দুই একটা ভীত মৃগ তাঁহাদিগের পার্শ্ব দিয়া উদ্ধশ্বাসে পলায়ন করিল।

 উভয়ে আরও গহন বনে প্রবেশ করিলেন। কিছু দুর অগ্রসর হইয়াই ম্যাট্‌সন্ থমকিয়া দাঁড়াইলেন। কহিলেন,—“ওটা কে দেখুন দেখি—”

৫২