পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
চয়নিকা

বলে বার বার, “কর্তা তোমার কোনো ভয় নাই, শুন,
যাবে দেশে ফিরে, মা-ঠাকুরানীরে দেখিতে পাইবে পুন।”
লভিয়া আরাম আমি উঠিলাম, তাহারে ধরিল জ্বরে;
নিল সে আমার কাল-ব্যাধিভার আপনার দেহ-’পরে।
হয়ে জ্ঞানহীন কাটিল দু-দিন বন্ধ হইল নাড়ী।
এতবার তারে গেনু ছাড়াবারে, এতদিনে গেল ছাড়ি’।
বহুদিন পরে আপনার ঘরে ফিরি সারিয়া তীর্থ।
আজ সাথে নেই চিরসাথী সেই মোর পুরাতন ভৃত্য।

—চিত্রা

১২ ফাল্গুন, ১৩০১


দুই বিঘা জমি

শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভূঁই, আর সবি গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, “বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কিনে।”
কহিলাম আমি, “তুমি ভূস্বামী, ভূমির অস্ত নাই;
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো-জোর মরিবার মতো ঠাঁই।”
শুনি’ রাজা কহে, “বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দীঘে সমান হইবে টানা—
ওটা দিতে হবে।”—কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সব্জল চক্ষে, “করুন রক্ষে গরিবের ভিটেখানি।
সপ্তপুরুষ যেথায় মানুষ সে-মাটি সোনার বাড়া,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে-মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া?”
আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিলা মৌনভাবে,
কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে, “আচ্ছা সে দেখা যাবে॥”