পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
চয়নিকা
৮০

দুয়ারে রহিলি ব’সে ছবির মতন,
আমি দেখে চলে এনু মুছিয়া নয়ন।

চলিতে চলিতে পথে হেরি দুইধারে
শরতের শস্যক্ষেত্র নত শস্যভারে
রৌদ্র পোহাইছে। তরুশ্রেণী উদাসীন
রাজপথপাশে, চেয়ে আছে সারাদিন
আপন ছায়ার পানে। বহে খরবেগ
শরতের ভরা গঙ্গা। শুভ্র খণ্ডমেঘ
মাতৃদুগ্ধ-পরিতৃপ্ত সুখনিদ্রারত
সদ্যোজাত সুকুমার গোবৎসের মতো
নীলাম্বরে শুয়ে। দীপ্ত রৌদ্রে অনাবৃত
যুগযুগান্তরক্লান্ত দিগন্তবিস্তৃত
ধরণীর পানে চেয়ে ফেলিনু নিঃশ্বাস।
কী গভীর দুঃখে মগ্ন সমস্ত আকাশ,
সমস্ত পৃথিবী। চলিতেছি যত দূর
শুনিতেছি একমাত্র মর্মান্তিক সুর,
“যেতে আমি দিব না তোমায়।” ধরণীর
প্রান্ত হতে নীলাভ্রের সর্বপ্রান্ততীর
ধ্বনিতেছে চিরকাল অনাদ্যন্ত রবে
“যেতে নাহি দিব। যেতে নাহি দিব।” সবে
কহে, “যেতে নাহি দিব।” তৃণ ক্ষুদ্র অতি
তা’রেও বাধিয়া বক্ষে মাতা বসুমতী
কহিছেন প্রাণপণে “যেতে নাহি দিব।”
আয়ুক্ষীণ দীপমুখে শিখা নিব’-নিব’
আঁধারের গ্রাস হতে কে টানিছে তা’রে
কহিতেছে শতবার, “যেতে দিব না রে।”