পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
চীন ভ্রমণ।

অবস্থায় সাদা ধুতি পরিধেয়, ও অঞ্চলে সর্ব্বত্র সেইরূপ সাদা রঙ্গই শোক প্রকাশের চিহ্ন বলিয়া বিবেচিত। ইউরোপে কিন্তু সাদা রঙ শোকাব্যজ্ঞক নহে; কালো রঙই শোকব্যজ্ঞক।

 চাউল ও শেগুন কাঠই বর্ম্মার প্রধান উৎপন্ন দ্রব্য। ইহা ছাড়া হীরার খনি ও বর্ম্মা-অয়েল নামক কেরোসিন-জাতীয় এক প্রকার খনিজ তৈলও পাওয়া যায়। পূর্ব্বেই বলিয়াছি, এত থাকিতেও বর্ম্মার লোক গরীব। আলস্য ও অবিবেচনাই তাহার প্রধান কারণ। তাহারা কিন্তু কাঠ ও গালার কাজে সুনিপুণ শিল্পী। রেশম ও বর্ম্মা চুরুটের অল্প-বিস্তর কারবার চলে। আমি এ সকল জিনিষের কিছু কিছু নমুনাও আনিয়াছি।

 বর্ম্মাবাসীরা তাড়ি খায় এবং মাতলামি করে; কিন্তু চীনদেশে অমন দেখি নাই। সকল দেশের সব পাপ-অভ্যাসগুলি বর্ম্মাবাসীরা আজকাল অনুকরণ কবিয়াছে। শুনিলাম, তাদের দেশে মদ বা আফিং কিছুরই তত প্রচলন ছিল না। এখন চীনেদের কাছ থেকে আফিং ও পাশ্চাত্য জাতি ও ভারতবাসীর নিকট মদ থাহিতে শিখিয়াছে। একটা তাড়িথানার কাছে দাঁড়াইয়া কতকগুলি লোকের কাণ্ডকারখানা দেখিতেছিলাম। তারা অতি অশ্লীল ভঙ্গী করিয়া আমায় ভেঙ্গচাইতে লাগিল! কিন্তু চীনদেশে কত আফিং খাবার আড্ডায় গিয়াছি, তারা কেহ কিছু বলে নাই।

 পূর্ব্বেই বলিয়াছি, ভারতবর্ষ। বর্ম্মাবাসীর তীর্থস্থান। অনেক যাত্রী বুদ্ধগয়া, রাজগৃহ, বারাণসী প্রভৃতি স্থানে তীর্থ করিতে আসেন। আমি যখন দেশে ফিরিতেছিলাম, তখন কতকগুলি ভদ্রবংশীয় স্ত্রী ও পুরুষ তীর্থ করিতে অ্যাসিতেছিলেন। তাঁহাদের মধ্যে অনেকেই জিজ্ঞাসা করিতেন,—আমার কতকগুলি ছেলে-মেয়ে। ছেলে-মেয়েতে আমাদের ঘর ভরা, এই কথা শুনিয়া তাঁহাদের আর আনন্দের সীমা থাকিতে না।