পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ব্রহ্মদেশ
৩৩

বাড়াতে কাতর, এমন ভাব তাহার মুখে ছিল না। স্ত্রীলোকেরা তার দোষ ঢেকে তার পক্ষসমর্থন ক’চ্ছিল। সকল পুরুষদেরই দেখিলাম বুদ্ধের দিকে টান। কে জানে কেন, বুড়োর প্রতি আমার অণুমাত্রও সহানুভূতি হ'লো না। অবিবেচনার কার্য্যে,অসম্ভব বিষয়ে সহানুভূতি কেমন ক’রে হবে?

 এক দিন লেক্ পার্ক দেখিতে যাবার সময় রাস্তায় দেখিলাম একটি আধবয়সী বর্ম্মা রমণী কাঁদছে। দু’জন লোক তাকে সাবধানে ধ'রে নিয়ে যাচ্ছিল। সে বড়ই আকুলভাবে কাঁদছিল। কাঁদচে এ জানতে তো ভাষা জানার দরকার হয় না। তবে কি জন্য ও কাহার জন্য কাঁদচে জানিবার জন্য আমার খোট্টা গাড়োয়ানকে জিজ্ঞাসা করিলাম। সে জেনে বল্লে, সর্পাঘাতে উহার ছেলে মারা গিয়েছে, তাই কাঁদচে। কান্নার বুলিটি এইরূপ, “তুমি গেলে আমি রইলাম, তোমাকে আর ঘরে গিয়ে দেখতে পাব না, সে ঘরে কেমন ক’রে থাকবো?” ঠিক কি আমাদের দেশের মত! তার সঙ্গীরা ও কঁদিতে কঁদিতে তাহাকে বুঝাচ্চে-ঠিক কি আমাদের দেশের মত! পথে যে দেখচে, যে শুনচে সেই চোখের জল ফেলে যাচ্চে,—ঠিক কি আমাদের দেশের মত!

 দুই দিন পরে রেঙ্গুন হইতে জাহাজ ছাড়িল। একটি স্ত্রীলোক এক প্রৌঢ়াকে জাহাজে চড়িয়ে দিতে এসেছিল। জাহাজ ছাড়িলে সে নদীতীরে ধূলায় লুটিয়ে অতিশয় কাতর হ’য়ে কঁদিতে লাগল। যতক্ষণ দেখা যায়, দেখলাম রেখার মত তার দেহটি মাটিতে পড়ে রয়েছে।