শয্যাশায়িনী হইলেন। সকলেই প্রায় অল্প-বিস্তর পীড়াক্রান্ত হইলেন। কেহ উঠে না, চলে না, নিজ স্থান ছাড়ে না, –যেখানে সেখানে বমি করে। যখন তখন বমির শব্দ; কেবল কষ্টপ্রদ বমির চেষ্টামাত্র,— উঠে অতি কম। প্রথম শ্রেণীর খাইবার ঘরে ৩৩ জনের আসনের এগারটি মাত্র আসন ভর্ত্তি, তার মধ্যে ৭ জন জাহাজের উচ্চ কর্ম্মচারী অভ্যস্ত বলিয়া তাঁদেরই কেবল সামুদ্রিক পীড়া হইল না। অন্য সকলেই অল্প-বিস্তর ভুগিল। আর লেখক নিজে কাতর হইয়া একেবারে নিরম্বু উপবাসে প্রায় তিন দিন পড়িয়ছিলেন। সে যাতনার কথা বর্ণনা করা যায় না। তবে অল্পদিনেই তাহা সহ্য হইয়া যায়,তাই রক্ষা; নইলে সমুদ্রযাত্রা অসম্ভব হইত।
সামুদ্রিক পীড়া আরম্ভের সঙ্গে সঙ্গে বিস্তুর চীনেম্যান যাত্রী মারা যাইতে লাগিল। প্রত্যহ দুই একটি করিয়া মৃতদেহ সমুদ্রবক্ষে ফেলিয়া দেওয়া হইত। আশ্চর্য এই যে,চীনেম্যান ছাড়া অন্য জাতীয় যাত্রী একটিও মরিল না। তাঁহার কারণ পূর্ব্বেই আভাসে বলিয়াছি। চীনেম্যানদের মধ্যে হৃদরোগের প্রাদুর্ভাব বড়ই বেশী। তাদের হৃদযন্ত্র বড়ই দুর্ব্বল। অহরহ বমির বেগ তাহাদের দুর্ব্বল হৃদয় সহ্য করিতে না পারায় হঠাৎ মৃত্যু ঘটিত। দেখা যাইত, কেহ বা আপনার কাপড়ের সিন্দুকের উপর শুইয়াই মারিয়া আছে, কেহ বা দেওয়ালে ঠেস দিয়া বসিয়াই শেষ হইয়া গিয়াছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বৃদ্ধ,—সারা জীবন বিদেশে খাটিয়া অর্থ উপর্জন করিয়া বাড়ী যাইতেছিল;নিজের দেশে মৃত্যু চীনেম্যানের বড়ই প্রার্থনীয়; দেশের উপর তাদের এতই ভালবাসা। কিন্তু আত্মীয় স্বজনের উপর অনেকেরই তত ভালবাসা নাই। গৃহ-পালিত পশুর মধ্যে দুই শ্রেণীর জন্তু দেখা যায় কুকুর ও ঘোড়া মানুষ চেনে,—আবাস-স্থানের উপর তত বেশী অনুরক্ত নহে। প্রভু যেখানে যায় অকাতরে অনুগমন করে। কিন্তু গরু