পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একবিংশ পরিচ্ছেদ
১০৩

নাই। রাত্রি অন্ধকার, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, অবিশ্রান্ত বৃষ্টি পড়িতেছে এবং মাঝে মাঝে মেঘের গর্জ্জন পৃথিবীকে কাঁপাইয়া তুলিতেছে। এই সময় দীপশূন্য একটি অন্ধকার কক্ষে, বালিকা কনক একাকী শুইয়াছিল। সহসা বজ্রের কড়মড় শব্দে কনক চমকিয়া উঠিল। অন্ধকারে ভীত হইয়া উঠিয়া বসিল, আলোক পাইবার নিমিত্ত বিছানা হইতে হাত বাড়াইয়া কক্ষের একটি বাতায়ন খুলিয়া দিল। অমনি সহসা সুমধুর সঙ্গীত ধ্বনি তাহার কর্ণে প্রবেশ করিল, শুনিল—

রিমঝিম ঘন বরিষে—সখিলো,
বিরহী নয়ন পারা, ঢালিছে শ্রাবণ ধারা,
কি জ্বলে মরমে জ্বালা, নিভাই কেমনে সে,
গুরু গুরু গর্জ্জনে গর্জ্জে নবীন ঘন,
দলকে দামিনী বিকাশে।”

 এই সময় আর একবার বজ্রের কড়মড় শব্দ হইল, গান থামিয়া গেল, অমনই সুশীলা এই গৃহ মধ্যে প্রবেশ করিলেন। ঝড় বৃষ্টির প্রারম্ভে কনক একাকী আছে বলিয়া তাঁহার কষ্ট হইতেছিল। কিন্তু তিনি মনকে এই বলিয়া প্রবোধ দিয়াছিলেন যে কনকের দোষেই তো তাহাকে এইরূপ একাকী থাকিতে হইতেছে—তিনি কি করবেন? পরে, যখন একবার বজ্রধ্বনিতে বাড়ী কাঁপিয়া উঠিল, সুশীলার চক্ষু ঝলসিত করিয়া কনকের কক্ষের সম্মুখস্থ একটী বৃক্ষ বজ্রাগ্নিতে জ্বলিয়া উঠিল, তখন সুশীলার মনের পাষাণ বাঁধ অকস্মাৎ আমূল টুটিয়া পড়িল। সুশীলার ভয় হইল, কনকের কক্ষে তাহা হয়তো পড়িয়াছে। তিনি ব্যাকুল ভাবে সেই গৃহের দিকে ছুটিলেন, মনে হইল তিনি কনকের হত্যাকারী, তাঁহার নিমিত্তই বজ্রাঘাতে কনকের মৃত্যু হইল। বারাণ্ডা দিয়া আসিতে আসিতে আকাশের দিকে চাহিয়া দেখিতে পাইলেন, যেন সেই বজ্র বৃষ্টি বিদ্যুতের মধ্যে কনকের মাতা দাঁড়াইয়া বলিতেছেন “তুমিই আজ