পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দশম পরিচ্ছেদ
৪৫

তাঁহাকে তৎক্ষণাৎ উপরে আনিতে ভৃত্যকে আদেশ করিলেন, ভৃত্য বলিল “তিনি আসবেন না, বস্‌বেন না, পথে দাঁড়িয়ে আছেন, পথেই আপনার সঙ্গে কি কথা ক’য়ে চলে যাবেন। প্রমোদ কিছু আশ্চর্যা হইয়া বলিলেন “তবে চল।” এই বলিয়া ভৃত্যের সহিত প্রমোদ সন্ন্যাসীর নিকট আসিলেন। সন্ন্যাসীকে দেখিয়া চিনিতে পারিলেন এবং আহ্লাদের সহিত প্রণাম করিয়া বলিলেন, “যদি অনুগ্রহ কবে আমাকে মনেই করলেন, তবে একবার ভিতরে এসে বসুন।”

 সন্ন্যাসী মৃহুগম্ভীর স্বরে বলিলেন, “না আমার সঙ্গে একটু বিরলে এস, বিশেষ প্রয়োজন আছে।” বলিয়া সন্ন্যাসী অগ্রে অগ্রে গমন করিলেন, প্রমোদ তাঁহার অনুসরণ করিয়া বিজন উদ্যানের এক নিভৃত প্রান্তে গিয়া দাঁড়াইলেন।

 তখন রাত্রির প্রথম প্রহর অতীত হইয়া গিয়াছে, আকাশের ক্ষীণ চন্দ্র ক্ষীণালোকে এতক্ষণ পর্য্যন্ত পৃথিবীকে অল্প পরিমাণে উজ্জ্বল করিতেছিল, ক্রমে তাহাও আকাশের কোলে ডুবিয়া গিয়াছে। রজনী অন্ধকার, কিন্তু অসংখ্য খ্যাতমালা এই অন্ধকারে, বাগানের গাছপাতার মধ্যে নিবিয়া নিবিয়া জ্বলিতেছে, এবং সহরের দীপমালা শ্রেণীবদ্ধ তারকারাজির মত দূরে শোভা পাইতেছে। এই নিস্তব্ধ বিজনে আসিয়া, নিশার গভীর নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া সন্ন্যাসী মেঘনির্ঘোষবৎ গম্ভীরস্বরে বলিলেন, “প্রমোদ, তোমার এ কি আচরণ?”

 সন্ন্যাসীর স্বরে সন্ন্যাসীর কথায় প্রমোদ আশ্চর্য্যভাবে বলিলেন—

 "আমার কি আচরণ?”

 সন্ন্যাসী অধিকতর গম্ভীর স্বরে অধিকতর ক্রুদ্ধস্বরে বলিলেন—

 "পাষণ্ড! নরাধম! আমার নীরজা কোথায়?”