পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই সব সময়ে এই নির্জন অপরাহ্নগুলিতে নিশ্চিন্দিপুরের কথা কেমন করিয়া তাহার মনে পড়িয়া যায় । সেই একদিনের কথা মনে পড়ে।-- বাড়িতে পাশের পোড়ো ভিটার বনে অনেকগুলো ছাতারে পাখি কিচমিচ করিতেছিল, কি ভাবিয়া একটা ঢ়িল ছুড়িয়া মারিতেই দলের মধ্যে ছোট একটা পাখি ঘাড় মোচড়াইয়া টুপ করিয়া ঝোপের নিচে পড়িয়া গেল, বাকীগুলে। উড়িয়া পলাইল। তাহার ঢ়িলে পাখি সত্য সত্য মরিবে ইহা সে ভাবে নাই, দৌড়িয়া গিয়া মহা আগ্রহে দিদিকে ডাকিল, ওরে দিদি, শীগগির আয়রে, দেখবি একটা জিনিস, ছুটে আয় দুৰ্গা আসিয়া দেখিয়া বলিল, দেখি, দে-দিকি আমার হাতে ! পরে সে নিজের হাতে পাখিটিকে লইয়া কৌতুহলেব সহিত নাড়িয়া চাড়িয়া দেখিল । ঘাড় ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, মুখ দিয়া রক্ত উঠিয়াছে, দুর্গার আঙুলে রক্ত লাগিয়া গেল । দুৰ্গা তিরস্কারের সুরে বলিল, আহা কেন মারতে গেলি তুই ? অপুর বিজয়গর্বে উৎফুল্ল মন একটু দনিয়া গেল। দুৰ্গা বলিল, আজ কি বার রে ? সোমবার না ? তুই তো বামুনের ছেলে—চল, তুই আর আমি একে নিয়ে গিয়ে গাঙের ধারে পুড়িয়ে আসি, এর গতি হয়ে যাবে। তারপর দুৰ্গা কোথা হইতে একটা দেশলাই সংগ্ৰহ করিয়া আনিল তেঁতুলতলার ঘাটের এক ঝোপের ধারে শুকনো পাতার আগুনে পাখিটাকে খানিক পুড়াইল, পরে আধ-ঝলসানো পাখিটা নদীর জলে ফেলিয়া দিয়া সে ভক্তিভাবে বলিল-হরিবোল হরি, হরি ঠাকুর ওর গতি করবেন, দেখিস! আহা, কি ক’রে ঘাড়টা থেতলে দিয়েছিলি ? কখখনো ওরকম কারিস নে আর । বনে জঙ্গলে উড়ে বেড়ায়, কারুর কিছু করে না, মারতে আছে, ছিঃ - নদী হইতে অঞ্জলি ভরিয়া জল তুলিয়া দুৰ্গা চিতার জায়গায় ধুইয়া দিল। ܦ