পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
জননী

করতে,—বড় হলে ওরা কেউ আমাকে মানবে? এখনি কেমন ধারা করে দাখাে না?

 কিন্তু একটা দিনে ওদের তুমি কি করতে পারবে ঠাকুরঝি? ফিরে গেলেই তাে যে কে সেই। মাঝ থেকে শাশুড়ীর কতগুলাে গালমন্দ খেয়ে মরবে।

 মন্দার এসব হিসাব করাই আছে।

 একটু চেনা হয়ে রইল। একেবারে কাছে ঘেঁষত না, এবার ডাকলে টাকলে একবার দুবার আসবে।

 একদিন বিষ্ণুপ্রিয়া আসিয়াছিল।

 বিষ্ণুপ্রিয়ার একটি মেযে হইয়াছে। মেয়ের জন্মের সময় সেও শ্যামার মত কষ্ট পাইয়াছিল, শ্যামা ভাগ্যের সঙ্গে তাহার ভাগ্যের পার্থক্য কিন্তু সব দিক দিয়াই আকাশ-পাতাল, মেয়েটি তাহার মরে নাই, সােনার চামচে দুধ খাইয়া বড় হইতেছে। বিষ্ণুপ্রিয়ার শরীর খুব খারাপ হইয়া পড়িয়াছিল, কোথায় হাওয়া বদলাইতে গিয়া সারিয়া আসিয়াছে, কিন্তু এখনাে তাহার চোখ দেখিলে মনে হয় রােগযন্ত্রণার মতই কি একটা অস্থিরতা যেন সে ভিতরে চাপিয়া রাখিয়াছে। তা ছাড়া, তাহার সাজসজ্জার অভাবটা অবাক করিহা দেয়। এমন একদিন ছিল সে যখন বসনভূষণে, কেশরচনা ও দেহমার্জনার অতুল উপাদানে নিজেকে সব সময় ঝক্‌ঝকে করিয়া রাখিত। ত্বকে থাকিত জ্যোতি, কেশে থাকিত পালিশ, বসনে থাকিত বর্ণ ও ভূষণে থাকিত হীরার চমক। এখন সে সব কিছুই তাহার নাই। অলঙ্কার প্রায় সবই সে খুলিয়া ফেলিয়াছে, বিন্যস্ত কেশরাজিতে ধরিয়াছে কতগুলি ফাটল, সে কাছে থাকিলে সাবান ছাড়া আর কোন সুগন্ধির ইঙ্গিত মেলে না। তাও মাঝে মাঝে নিশ্বাসের দুর্গন্ধে চাপা পড়িয়া যায়।

 ঘনিষ্ঠতার বালাই না থাকিলেও মন্দা চিরকাল ঘনিষ্ঠ প্রশ্ন করিয়া থাকে।

 সাজগােজ একেবারে ছেড়ে দিয়েছেন দেখছি।

 বিষ্ণুপ্রিয়া হাসিয়া বলে, এবার মেয়ে ওসব করবে।

 একটি মেয়ে বিইয়েই সন্নেসিনী হয়ে গেলেন?