বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ - প্রফুল্লকুমার সরকার (১৯৪৭).pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গঠনমূলক স্বদেশ সেবা
৮৭

উত্তেজনা যখন দূর হইল, তখন আমরা নিঃসম্বল হইয়া পড়িলাম। প্রতিক্রিয়া স্বরূপ যে অবসাদ ও জড়তা দেখা দিল, তাহা আমাদের জাতীয় জীবনকে এখনও আচ্ছন্ন করিয়া আছে।

 আয়র্লাণ্ডের জাতীয় আন্দোলনের নেতাগণ এই সত্যটি ধরিতে পারিয়াছিলেন। তাই একদিকে যখন প্রবল ‘সিনফিন’ আন্দোলন চলিতেছিল, ঠিক সেই সময়ে আর একদল লোক জর্জ রাসেল, স্যার হোরেস প্লাঙ্কেট প্রভৃতির নেতৃত্বে আয়র্লাণ্ডের গ্রামে গ্রামে গঠনমূলক কার্য করিতেছিলেন। ফলে আইরিশদের জাতীয় শক্তি কখনও দেউলিয়া হইয়া পড়ে নাই, পরবর্তীকালে স্বাধীনতার সাধনায় তাহারা সিদ্ধিলাভ করিয়াছে বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। মহাত্মা গান্ধীও এই সত্য তাঁহার স্বচ্ছ দূরদৃষ্টিতে উপলব্ধি করিয়াছেন। তাই অসহযোগ আন্দোলন এবং তাহার পরবর্তী আইন অমান্য আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে তিনি গঠনমূলক কার্য করিবার নির্দেশ দিয়াছিলেন। এমন কি, ঐজন্য তিনি কংগ্রেস হইতে স্বতন্ত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও গড়িয়া তুলিয়াছেন। দেশের জনসাধারণের উপর তাঁহার অসীম প্রভাবের মূল উৎস ইহারই মধ্যে নিহিত। রবীন্দ্রনাথ বহুকাল পূর্বে যে সব কথা বলিয়াছিলেন, মহাত্মা গান্ধী তাঁহার নিজস্ব ভাষা ও ভঙ্গীতে সেই সব কথাই গঠনমূলক কর্মসাধনা সম্বন্ধে বলিয়াছেন। বর্তমানে যে জাতীয় সঙ্কট উপস্থিত হইয়াছে, তাহার মধ্যেও মহাত্মা গান্ধী গঠনমূলক কার্যের কথা বিস্মৃত হন নাই, বরং উহাকেই প্রধান স্থান দিয়াছেন।