বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ - প্রফুল্লকুমার সরকার (১৯৪৭).pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উপসংহার
১০৭

রবীন্দ্রনাথ জীবনের প্রথম হইতেই ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির ভক্ত ছিলেন। বাল্যে পিতার নিকট হইতে যে শিক্ষা তিনি লাভ করিয়াছিলেন, তাহাতে এইরূপ হওয়াই স্বাভাবিক। উপনিষদের মধ্য দিয়া আমাদের প্রাচীন ঋষিরা যে সব সার সত্য ব্যক্ত করিয়া গিয়াছেন, রবীন্দ্রনাথের মতে উহাই ভারতের আত্মার শাশ্বত বাণী। ভারতের এই শাশ্বত বাণী রবীন্দ্রনাথের সমগ্র জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করিয়াছে। আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতার সঙ্গে তাঁহার গভীর পরিচয় ছিল, সেই সভ্যতার মধ্যে যে তেজস্কর সত্য আছে, তাহার প্রতি স্বদেশবাসীর দৃষ্টি চিরদিনই তিনি আকর্ষণ করিয়াছেন। কিন্তু অন্য দিকে ভারতের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির ঐশ্বর্যের কথা দেশবাসী যাহাতে না ভুলে, সেই দিকেও তাঁহার সতর্ক দৃষ্টি ছিল। কেবল তাহাই নয়, স্বামী বিবেকানন্দের মত তিনিও মনে করিতেন যে, ভারতের পক্ষ হইতে তাহার সুপ্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির বার্তা বর্তমান জগতের নিকট প্রচার করা কর্তব্য। কেননা তাহাতে বিশ্বমানবের প্রকৃত কল্যাণ হইবে। জীবনের শেষ ভাগে এই কারণেই রবীন্দ্রনাথ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করিয়া ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির বার্তা প্রচার করিয়াছিলেন। এক কথায় তিনি হইয়াছিলেন আধুনিক জগতের নিকট ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির দূত। আর এই দৌত্যকার্য তিনি এমন কৃতিত্বের সঙ্গে করেন যে, বিশ্বের দরবারে ভারতের মর্যাদা বাড়িয়া গিয়াছিল।