হিন্দু মেলায় দেশবাসীর চিত্তে স্বদেশপ্রেমের উদ্বোধন করিবার চেষ্টা হইত। স্বদেশী শিল্পের পুনরুদ্ধারের আয়োজনও এই মেলাতেই সর্বপ্রথম হইয়াছিল। হিন্দু মেলায় যে জাতীয় আন্দোলনের সূচনা হইয়াছিল, তাহার মধ্যে আমরা কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেখিতে পাই। প্রথমত, হিন্দু মেলার উদ্যোক্তারা অখণ্ড ভারত ও এক ভারতীয় মহাজাতি গঠনের স্বপ্নই দেখিয়াছিলেন, কেবল বাঙলা ও বাঙালীর কথা ভাবেন নাই। ইহার পূর্বে ভারতবর্ষের কোন প্রদেশে কেহ অখণ্ড ভারত ও ভারতীয় মহাজাতির কথা বলেন নাই। এ গৌরব বাঙলারই প্রাপ্য এবং হিন্দু মেলার উদ্যোক্তাদের নিকটই সমগ্র দেশ এজন্য ঋণী। রবীন্দ্রনাথ তাঁহার ‘জীবনস্মৃতি’তে এবং অবনীন্দ্রনাথ তাঁহার ‘ঘরোয়া’তে একথা স্পষ্টভাবেই বলিয়াছেন। যাঁহারা বলেন, কংগ্রেসই ‘ভারতীয় মহাজাতি’র কথা প্রথম বলিয়াছেন, তাঁহারা ভুল বলেন, কংগ্রেসের পূর্ববর্তী বাঙলার আর একটি প্রতিষ্ঠান ‘ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’ও এই ভাব প্রচার করিয়াছিলেন বটে, কিন্তু তাহাও হিন্দু মেলার পরে এবং ‘ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’ যে হিন্দু মেলার নিকট হইতেই এই ভাব গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। হিন্দু মেলা প্রবর্তনের ৯ বৎসর পরে ১৮৭৬ সালে ‘ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রতিষ্ঠা হয়। (শিবনাথ শাস্ত্রীর ‘আত্মচরিত’ দ্রষ্টব্য)।
হিন্দু মেলার দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য ইহার অনুষ্ঠাতারা ‘আত্মশক্তি’র বলেই দেশের স্বাধীনতা লাভ করিতে চাহিয়াছিলেন, আবেদন-নিবেদনের পথে নয়।