ও প্রবন্ধের দ্বারা সেই সব ভাববিপ্লবের বীজ পূর্ব হইতেই যুবকগণের চিত্তে বপন করিতেছিলেন।
এই সময়ে আর যে কয়জন শক্তিমান পুরুষ রবীন্দ্রনাথের সহকর্মীরূপে যুবকগণের চিত্তে দেশাত্মবোধের উদ্বোধন করিতেছিলেন, তন্মধ্যে উপাধ্যায় ব্রহ্মবান্ধব ও বিপিনচন্দ্র পালের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ করিতে হইবে। ইঁহারা দুইজনেই নবপর্যায়ের ‘বঙ্গদর্শনে’র লেখক ছিলেন। গৈরিকধারী তেজঃপুঞ্জ সন্ন্যাসী ব্রহ্মবান্ধবকে প্রথম যখন অ্যালবার্ট হলের একটি সভায় দেখি[১] তখন মনে হইয়াছিল—এ যেন মূর্তিমান অগ্নিশিখা। স্বামী বিবেকানন্দের মত তাঁহারও দেহমনপ্রাণ স্বদেশপ্রেমে পূর্ণ ছিল,—দেশের জন্যই আত্মোৎসর্গ করিয়া তিনি সন্ন্যাস-ব্রত গ্রহণ করিয়াছিলেন। তখনকার দিনে তিনি যে সব প্রবন্ধ লিখিতেন ও বক্তৃতা করিতেন, তাহার এক একটি ছিল যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ; দেশের চারিদিকে স্বদেশপ্রেমের বহ্নিশিখা ছড়াইয়া দেওয়াই ছিল তাঁহার কাজ। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁহার ঘনিষ্ঠ বন্ধুতা হইয়াছিল এবং উভয়ে উভয়ের দ্বারা বহুল পরিমাণে প্রভাবিত হইয়াছিলেন। যে আত্মশক্তির সাধনা রবীন্দ্রনাথের মূল মন্ত্র
- ↑ সে সময়ে ফারকোহার নামক ওয়াই. এম. সি-এর একজন পাদরী সাহেব হিন্দুধর্ম ও গীতার নিন্দা করিয়া একখানি পুস্তিকা প্রচার করিয়াছিলেন। এই পুস্তিকার তীব্র প্রতিবাদ করিয়া উপাধ্যায় ব্রহ্মবান্ধব অ্যালবার্ট হলের সভায় বক্তৃতা করেন। সভাপতি ছিলেন মেট্রোপলিটন কলেজের অধ্যক্ষ নগেন্দ্রনাথ ঘোষ। হীরেন্দ্রনাথ দত্ত অন্যতম বক্তা ছিলেন। প্রধান বক্তারূপে ব্রহ্মবান্ধব হিন্দুধর্ম ও গীতার গৌরব কীর্তন করিয়া যে ওজস্বিনী বক্তৃতা দিয়াছিলেন, তাহা আমি কখনও ভুলিতে পারি নাই।