করিলেন—Independence বা স্বাধীনতা। সে স্বাধীনতা যে ভিক্ষার পথে লাভ হইবে না, তাহার জন্য আত্মশক্তির সাধনা করিতে হইবে, ইহাও তিনি নির্ভীকভাবে জাতির নিকট প্রচার করিলেন। এই সম্পর্কে ‘বন্দে মাতরম্’-এর‘Crime of Nationalism’ প্রবন্ধ বাঙলার জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে অমর হইয়া রহিয়াছে।
একটু অনুধাবন করিলেই বুঝা যায় যে, শ্রীঅরবিন্দ–বিপিনচন্দ্র-ব্রহ্মবান্ধবের প্রচারিত এই নব জাতীয়তাবাদ বঙ্কিমচন্দ্রের আদর্শ ও ভাবধারার দ্বারাই উদ্বুদ্ধ হইয়াছিল। বঙ্কিমচন্দ্রের মৃত্যুর ১২ বৎসর পরে স্বদেশী আন্দোলন আরম্ভ হয়। তাঁহার প্রচারিত আদর্শ ও ভাবধারা এই আন্দোলনের মধ্যে মূর্তি পরিগ্রহ করিল। বঙ্কিমচন্দ্র দেশমাতৃকার যে চিন্ময়ী রূপ ধ্যান করিয়াছিলেন, শ্রীঅরবিন্দ প্রমুখ নব জাতীয়তাবাদীরা সেই রূপই যেন প্রত্যক্ষ করিলেন, বঙ্কিমচন্দ্রের উপদিষ্ট আত্মোৎসর্গ, কর্মযোগ ও শক্তির সাধনাকেই তাঁহারা স্বাধীনতালাভের পন্থা বলিয়া গ্রহণ করিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের “বন্দে মাতরম্” সংগীত জাতীয় সংগীত বলিয়া গৃহীত হইল, “বন্দে মাতরম্” শব্দ দেশসেবক সন্তানদের ‘মন্ত্র’ বলিয়া গণ্য হইল। শ্রীঅরবিন্দ এই “বন্দে মাতরম্” মন্ত্রের যে অপূর্ব ব্যাখ্যা করিয়াছেন, তাহা সকলেরই সুবিদিত; তিনিই প্রথমে বঙ্কিমচন্দ্রকে “বন্দে মাতরম্” মন্ত্রের ঋষি বলিয়া অভিহিত করিয়াছিলেন এবং সমগ্র ভারত আজ সেইভাবেই বঙ্কিমচন্দ্রকে দেখিয়া থাকে।