কবির দল, পাঁচালীর দল, তীর ধনুকের খেলা প্রভৃতি গ্রাম্য আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থাও ছিল। উপাধ্যায় বলিতেন যে, বিলাতী কায়দায় স্মৃতিসভা করা আমাদের জাতির ধাতের সঙ্গে খাপ খায় না, এই গ্রাম্য মেলার দ্বারাই আমরা জাতীয় বৈশিষ্ট্য অনুসারে আরও ভাল করিয়া স্মৃতিরক্ষার ব্যবস্থা করিতে পারি। সে যাহা হউক, অপরাহ্ণে আধুনিক রীতিতেও মেলাক্ষেত্রে একটি সভা হইয়াছিল। সভাপতি ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্রের বন্ধু ও সাহিত্য-শিষ্য অক্ষয়চন্দ্র সরকার মহাশয়। তিনি সঙ্গে দুইটি বালক গায়ককে লইয়া আসিয়াছিলেন। সভার প্রথমে তাহারা উঠিয়া জয়দেবের ‘দশাবতার স্তোত্র’ মধুর কণ্ঠে গান করিল। একটি বালিকা বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বাজিয়ে যাব মল’ কবিতাটি চমৎকার আবৃত্তি করিল। তারপর শ্বেতকেশ, শ্বেতশ্মশ্রু অক্ষয়চন্দ্র সরকার মহাশয় বক্তৃতা করিতে উঠিলেন। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্রের কথা মনে করিয়া তাঁহার এমন ভাবাবেগ হইল যে, তিনি বক্তৃতা করিতে পারিলেন না, অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে বসিয়া পড়িলেন। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী প্রভৃতি কয়েকজন বঙ্কিমচন্দ্র সম্বন্ধে বক্তৃতা করিয়া সভা শেষ করিলেন। সন্ধ্যার পর বঙ্কিমচন্দ্রের পূজার দালানে রঙ্গমঞ্চ সাজাইয়া ‘আনন্দমঠ’ অভিনীত হইল। ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় স্বয়ং সত্যানন্দের ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছিলেন। ভবানন্দ, জীবানন্দ, মহেন্দ্র প্রভৃতির ভূমিকা কাহারা গ্রহণ করিয়াছিলেন মনে পড়িতেছে না। এইরূপে রাত্রি প্রায় ৯টার পর বঙ্কিম-স্মৃতি উৎসব শেষ হইল।
পাতা:জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ - প্রফুল্লকুমার সরকার (১৯৪৭).pdf/৭০
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ