কিছুদিন পরে পশুপতি বসুর বাড়ীর সেই প্রাঙ্গণেই যে ‘বিজয়া সম্মেলন হয়’, তাহাতেও রবীন্দ্রনাথ মর্মস্পর্শী বক্তৃতা করেন।
পূর্বেই বলিয়াছি, শ্রীঅরবিন্দ প্রমুখ নবীন জাতীয়তাবাদীদের নেতৃত্বে “বন্দে মাতরম্” শব্দটি ‘জাতীয় মন্ত্র’ হইয়া উঠে।[১] ঠিক এই কারণেই পুলিস ও সিভিলিয়ান—সংক্ষেপে আমলাতন্ত্রের পক্ষে “বন্দে মাতরম্” শব্দটি বিষবৎ মনে হইতে লাগিল, তাঁহারা উহাকে “বিদ্রোহ-ধ্বনি” বলিয়াই গণ্য করিতে লাগিলেন। বাঙলা সরকারের শিক্ষাবিভাগ এক সার্কুলার জারি করিয়া বসিলেন যে, কোন ছাত্র স্বদেশী সভায় যোগদান করিলে অথবা “বন্দে মাতরম্” ধ্বনি উচ্চারণ করিলে তাহাকে বিদ্যালয় হইতে বিতাড়িত করা হইবে। ইহাই কুখ্যাত “কার্লাইল সার্কুলার”। এই সার্কুলারের ফলে বাঙলার ছাত্র ও যুবক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবল উত্তেজনার সঞ্চার হইল। উহার প্রতিবাদ করিয়া বাঙলার সর্বত্র জনসভা হইতে লাগিল। রবীন্দ্রনাথ কলিকাতা অঞ্চলে এইরূপ কয়েকটি সভায় সরকারী স্বেচ্ছাচারের প্রতিবাদ করিয়া জ্বালাময়ী ভাষায় বক্তৃতা করেন। “কার্লাইল সার্কুলার”-এর ভয়ে যুবক ও ছাত্রেরা ভীত হওয়া দূরে থাকুক, বরং তাহারা আরও দ্বিগুণ উৎসাহে স্বদেশী সভায় যোগ
- ↑ স্বদেশী আন্দোলনে “বন্দে মাতরম্”ধ্বনি কবে প্রথম উচ্চারিত হইয়াছিল তাহা এখন নির্ণয় করা কঠিন। তবে আমাদের যতদূর স্মরণ হয়, ১৯০৫ সনের এই আগস্ট তারিখে টাউন হলে যে বিরাট ‘বয়কট’ সভা হইয়াছিল, তাহাতেই “বন্দে মাতরম্” ধ্বনি প্রথম উচ্চারিত হয়।