স্মরণ করিতে হইবে। প্রথমত, জাতীয় সংগীত রচনা, দ্বিতীয়ত, জাতীয় শিক্ষা প্রচার। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত রবীন্দ্রনাথকে ‘গানের রাজা’ আখ্যা দিয়াছেন। বাস্তবিক সংগীত রচনায় রবীন্দ্রনাথ কেবল বাঙলা দেশে কেন, সমগ্র পৃথিবীতে অদ্বিতীয় বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। এত অধিকসংখ্যক এবং এত বিচিত্র ভাবপূর্ণ গান পৃথিবীর অন্য কোন দেশের কোন কবি রচনা করেন নাই। রবীন্দ্রনাথের এই সংগীতাবলীর মধ্যে আবার জাতীয় সংগীত বা স্বদেশপ্রেমের সংগীতের সংখ্যা প্রচুর। স্বদেশী যুগে কয়েক সহস্র জাতীয় ভাবপূর্ণ সংগীত বাঙলা দেশের কবিগণ রচনা করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে একা রবীন্দ্রনাথের দানই সর্বাধিক। দেশমাতৃকাকে তিনি যে গভীরভাবে ভালবাসিয়াছিলেন, জাতীয় আন্দোলনে যেভাবে নিজের মনপ্রাণকে উৎসর্গ করিয়া দিয়াছিলেন—সেই প্রেম, সেই আত্মোৎসর্গ ই সহস্র ধারায় তাঁহার গানের মুখে উৎসারিত হইয়াছিল। এই সমস্ত গান একদিকে যেমন গভীর দেশপ্রেম, অন্যদিকে তেমনি অপূর্ব উদ্দীপনায় পূর্ণ। স্বদেশী আন্দোলনে বাঙলার সর্বত্র সহস্র সহস্র জনসভায়, হাটে, মাঠে, ঘাটে রবীন্দ্রনাথের এই সমস্ত গান গীত হইত। দেশবাসীর চিত্তে স্বদেশপ্রেম ও স্বদেশী ভাবের সঞ্চারে উহা যে কতদূর সহায়তা করিয়াছে, তাহা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তাঁহার সমগ্র স্বদেশী সংগীতের পরিচয় দেওয়া অসম্ভব, সামান্য কিছু পরিচয় দিতে চেষ্টা করিব।
পাতা:জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ - প্রফুল্লকুমার সরকার (১৯৪৭).pdf/৮১
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বদেশী আন্দোলন ( শেষার্ধ )
৬৭