পাতা:জীবনীকোষ-ভারতীয় ঐতিহাসিক-দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কবীর
জীবনী কোষ
১৪

কবীরের বাণী সমস্তই হিন্দী ভাষায় রচিত ও প্রচারিত।

 কবীর লেখাপড়া জানিতেন না। কিন্তু সহজজ্ঞান ও মুক্তবুদ্ধিবলে ধর্ম্মের গভীর তত্ত্ব, শাশ্বত সত্য ও মধুর কবিতা প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন। তিনি ভগবানকে রাম (আনন্দময়), প্রভু, সাঁই (স্বামী) আল্লা, খোদা (স্বধা বা আত্মপ্রতিষ্ঠা), পুরাসাহেব (পূর্ণব্রহ্ম), অনুগঢ়িয়া দেবা (অগঠিত, স্বয়ম্বু দেবতা) এই সকল নামে উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন। কবীরের সময়ে হিন্দু ও মুসলমান পরম্পর প্রতিবেশী হওয়াতে পরস্পরের ধর্ম্মমতে প্রভাব পরস্পরের উপর পড়িয়ছিল। কিন্তু মুসলমান তখন দেশের রাজা। তাঁহাদের ধর্ম্মবিশ্বাসের ও গোঁড়ামির জোর রাজশক্তির সাহায্যে অত্যন্ত প্রবল ছিল। সেইজন্য আত্মরক্ষার জন্য ব্রাহ্মণগণ আপনাদের আচার ও সামাজিক বিধি দৃঢ়তর নিয়মে বদ্ধ করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। এই অতি কঠোর নিয়মের গণ্ডিতে সমাজের প্রাণ যেন হাঁপাইয়া উঠিতেছিল। এই সময়েই রামানন্দ ও তাঁর শিষ্যগণ ধর্ম্মবিপ্লব উপস্থিত করিয়া সর্ব্বধর্ম্মসমন্বয় করবার চেষ্ট করেন। কবীরের প্রভাব তাঁর সমসাময়িক ও পরবর্ত্তী বহু সাধুভক্তের জীবনের উপর প্রতিফলিত হইয়াছিল। আহমদাবাদের দাদু এক কবীরপন্থীর শিষ্য
ছিলেন, প্রসিদ্ধ হিন্দি কবি তুলসীদাস, রাজপুতানার সাধিকা মীরাবাই, শিখধর্ম্ম প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানক প্রভৃতি তাঁহার বিশেষ গুণগ্রাহী ও ভক্ত ছিলেন। গুরু নানক তীর্থ পর্য্যটন ব্যপদেশে কাশীতে উপস্থিত হইয়া কবীরের অমৃতময়ী বাণী শ্রবণ করেন। শিখ ধর্ম্মশাস্ত্র ‘গ্রন্থসাহেব’ কবীরের বাণীতে পরিপূর্ণ। তদ্ভিন্ন অযোধ্যার জগজ্জীবন দাস প্রতিষ্ঠিত সৎনামী সম্প্রদায়, মালব দেশের বাবালাল প্রতিষ্ঠিত বাবালালী সম্প্রদায়, গাজীপুরের শিবনারায়ণ প্রতিষ্ঠিত শিবনারায়ণী সম্প্রদায় প্রভৃতি বহু সাধকসঙ্ঘ কবীরের উদার মতের প্রভাবে প্রভাবান্বিত। এই সকল সাধু মহাত্মাদের চেষ্টায় উত্তর ভারতের হিন্দু-মুসলমানের গোঁড়ামী ও অন্ধ কুসংস্কার বহুল পরিমাণে হ্রাস পাইয়াছে। কবীর ধর্ম্মভাবের ব্যাকুলতায় দূর দূরান্তর দেশসমূহে পর্য্যটন করিয়া, অবশেষে গোরখপুরের নিকটবর্ত্তী হিমালয়ের পদমূলে মগহর গ্রামে আসিয়া বাস করিতে থাকেন। তৎকালীন লোকের অন্ধবিশ্বাস ছিল যে, ব্যাসকাশীর ন্যায় মগহরে মৃত্যু হইলে মানুষ পরজন্মে গর্দ্দভযোনিতে জন্মগ্রহণ করে। তাঁহার হিন্দু ভক্তগণ তজ্জন্য তাঁহাকে স্থানান্তরে গমন করিতে অনুরোধ করিলে তিনি বলেন,—“কাশীতে দেহত্যাগ করিয়া, স্থান