পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিবাহোত্তর জীবন-কথা

সরলা দেবী আত্মজীবনীতে পঞ্জাব গমন পর্যন্ত বিবৃত করেন। রামভজ দত্তচৌধুরী পঞ্জাবের বিশিষ্ট ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যৌবনে ‘আর্যসমাজে’ প্রবিষ্ট হন; এই সময় পিতৃকুলের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন হইয়াছিল। সময়ান্তরে এই সম্পর্ক পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়। রামভজ দত্তচৌধুরী, দ্বিতীয়া পত্নীর বিয়োগের পর, তৃতীয় বার দারপরিগ্রহ করেন। পঞ্জাবের আর্যসমাজের সঙ্গে কলিকাতার আদি ব্রাহ্মসমাজের ঘনিষ্ঠ সংযোগ স্থাপিত হইয়াছিল। আদি ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদক জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর এক সময়ে আর্যসমাজের কর্তৃপক্ষের সহিত পত্র ব্যবহার দ্বারা উভয়ের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনে প্রয়াসী হইয়াছিলেন। সুতরাং আর্যসমাজী রামভজ দত্তচৌধুরীর সঙ্গে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের দৈৗহিত্রী সরলা দেবীর পরিণয়ে সকলেরই আন্তরিক সমর্থন ছিল। সরলা দেবীও অভিভাবক-অভিভাবিকাদের অভিমতকে সসম্ভ্রমে মানিয়া লন।

 রামভজ দত্তচৌধুরীর কর্মস্থল ছিল লাহোরে। তিনি ঐ সময়েই ব্যবহারাজীবরপে বেশ নাম করিয়াছিলেন। উপরন্তু, তিনি আর্যসমাজী নেতা এবং বিবিধ সমাজকর্ম ও সমাজসেবায় উদ্যোগী; সরলা দেবীর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হইয়া তাঁহার কর্মৈষণা দ্বিগুণ বাড়িয়া গেল; সরলা দেবীও পতির প্রতিটি কর্মে যোগ্য সহযোগী হইয়া উঠিলেন। ভারতবর্ষের বিভিন্ন শহরে আর্যসমাজের কেন্দ্র ছিল; এইসব কেন্দ্রে পুরুষ ও নারীদের বিবিধ অনুষ্ঠান-উৎসবে এই বিদগ্ধ দম্পতি যোগ দিতেন। সরলা দেবীর সময়োপযোগী ভাষণে আর্যসমাজী নরনারী চমৎকৃত হইতেন। এই-সকল সামাজিক মেলামেশা এবং নারীজাতির অনুন্নত অবস্থা প্রত্যক্ষ করার ফলেই সরলা দেবীর মনে একটি নিখিলভারতীয় মহিলা-সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার কম্পনা উদ্রিক্ত হইয়া থাকিবে। গার্হস্থ্যধর্ম পালনের সঙ্গে সঙ্গে সরলা দেবী বিবিধ সমাজকর্মেও লিপ্ত হইয়া পড়েন। ১৯০৭ সনের ৩রা জানুয়ারী তাঁহাদের একমাত্র পুত্র পণ্ডিত দীপক দত্তচৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৫