পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ১৯০৫-১৯২৩, এই আঠার-উনিশ বৎসর কাল সরলা দেবী পঞ্জাবে প্রবাস-জীবন যাপন করেন। এই সময়ে তিনি বহু সমাজহিতকর কার্যে লিপ্ত হইয়াছিলেন। এসব কার্য শুধু আর্যসমাজীদের মধ্যে নিবদ্ধ ছিল না; বিশিষ্ট সম্প্রদায়ের গণ্ডী ছাড়িয়া সমগ্র ভারতীয় জনগণের উদ্দেশ্যেই ইহা প্রযুক্ত হইত। সরলা দেবীর সাহিত্যচর্চা বরাবর অব্যাহত ছিল। ‘ভারতী’ মাসিকে এ সময়ও প্রবন্ধ, কবিতা প্রভৃতি প্রকাশিত হইয়াছে। সরলা দেবীর সমাজকর্ম নানা দিকে প্রসারিত হয়, এবং তাঁহার কার্যে স্বামী রামভজের সমর্থনও ছিল যথেষ্ট।

 ভারত স্ত্রী-মহামণ্ডল: সরলা দেবীর সমাজসেবার প্রধান অভিব্যক্তি—ভারত স্ত্রী-মহামণ্ডল। তিনি ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে পর্যটন করিয়া নারীজাতির অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। ইতিপূর্বে বাংলায় যুবশক্তির উদ্বোধনকল্পে তিনি যাবতীয় শক্তি নিয়োজিত করিয়াছিলেন। কিন্তু এককভাবে নারীদের উন্নতিপ্রয়াস তাঁহার এই প্রথম। মাতা স্বর্ণকুমারীর ‘সখি সমিতি’ এবং দিদি হিরন্ময়ীর ‘মহিলা শিল্পাশ্রম’ এই প্রতিষ্ঠান দুইটির আদর্শ তাঁহার সম্মুখে। এই প্রতিষ্ঠানদ্বয়ের যে যে অভাব ছিল তাহা পূরণকল্পেই এই ভারত স্ত্রী-মহামণ্ডলের প্রতিষ্ঠা। ১৯১০ সনে এলাহাবাদে ইণ্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের অধিবেশন হয়। এই সময়ে সরলা দেবীর উদ্যোগে একটি নিখিল ভারতীয় মহিলা সম্মেলনের অধিবেশন হইল জাজিরার মহারাণীর সভানেত্রীত্বে। অধিবেশনে সরলা দেবী ভারত স্ত্রী-মহামণ্ডল স্থাপনকল্পে একটি ভাষণ দেন। এই ভাষণে তিনি উক্ত মহামণ্ডলের উদ্দেশ্য বিবৃত করিয়া বলেন যে, ভারতের পর্দানশীন নারীদের শিক্ষার কোনরূপ ব্যবস্থা নাই। গৌরীদানের প্রথা তখনও বলবৎ থাকায় অন্তঃপুরে স্ত্রী-শিক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। কাজেই এ নিমিত্ত একটি সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠানের আবশ্যকতা সর্বত্র অনুভুত হইতেছে। বেতন দিয়া শিক্ষয়িত্রী নিয়োগ করিতে হইলে অর্থের খুবই প্রয়োজন। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে ভারত স্ত্রী-মহামণ্ডলের শাখা স্থাপন দ্বারা এই উদ্দেশ্য সাধন করিতে হইবে। সরলা দেবীর এই সুচিন্তিত ভাষণটির প্রিয়ম্বদা দেবী কৃত অনুবাদ ‘ভারতী’তে (চৈত্র, ১৩১৭) প্রকাশিত হইয়াছিল। সরলা দেবী ইহা পুস্তিকার আকারেও প্রকাশিত করেন।

 এই সম্মেলনে বিজয়নগর, প্রতাপনগর, কর্পূরতলার রাণীগণ এবং ভূপাল ও ক্যাম্বের বেগম সাহেবারা উপস্থিত ছিলেন। সরলা দেবী তখন

১৯৬