পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ফিরিয়া আসেন এবং হাইকোর্টে আইন-ব্যবসায় শুরু করিয়া দেন। এই ব্যবসায়ে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। তিনি ইংরেজী সাহিত্যে পণ্ডিত ছিলেন। ইংরেজ কবিদের জীবন ও কাব্য সম্বন্ধে তাঁহার কয়েকটি প্রবন্ধ 'ভারতী' মাসিকে প্রকাশিত হয়। আশুতোষ স্বদেশের হিতের জন্য বিবিধ আন্দোলনে যোগদান করিয়া ছিলেন। ১৯০৪ সনে বর্ধমানে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে সভাপতি হইয়াছিলেন। অভিভাষণে তিনি বলেন যে, “পরাধীন জাতির রাজনীতি নাই” {“A subject nation has no politics")। এই উক্তিটি লইয়া রাজনীতিক মহলে বিশেষ আলোচনার সৃষ্টি হয়। তিনি সমকালীন রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন। স্বদেশী আন্দোলনের সময় জাতীয় শিক্ষা প্রবর্তনে অগ্রণীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। জাতীয় শিক্ষা পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রুপেও তাঁহার নাম স্মরণীয়। তিনি বহু বৎসর ইহার অবৈতনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সভাপতি ছিলেন তিন বৎসর (১৯২০-১৯২৩)। বেঙ্গল ল্যাণ্ডহোল্ডার্স এসোসিয়েসন প্রতিষ্ঠার মূলেও ছিলেন আশুতোষ। এই প্রতিষ্ঠানটি স্বদেশী আন্দোলনের কালে গঠনমূলক কার্যে বিশেষ সহায়তা করে। আশুতোষ ১৯১২ সনে উত্তরবঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে (দিনাজপুর) সভাপতি হন। হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠা কন্যা প্রতিভা দেবীর সঙ্গে তাঁহার বিবাহ হয়। পত্নীর সঙ্গীতানুশীলন এবং সঙ্গীত শিক্ষাদানে তিনি বিশেষ উৎসাহ দান করিতেন।

 “চৌধরী মহাশয় সদালাপী, মিষ্টভাষী, বিনয়নম্র ও অমায়িক লোক ছিলেন। যেমন কাজের লোক ছাড়া সংসার চলে না, তেমনি কেবল কাজের লোকই পৃথিবীতে থাকিলে লোকালয়ের আনন্দ ও শ্রীসৌন্দর্য্য থাকে না, তজ্জন্য সামাজিকতার প্রয়োজন আছে। চৌধুরী মহাশয় যে কাজের লোক ছিলেন না, তাহা নহে; কিন্তু তিনি সামাজিকতার জন্য লোকপ্রিয় ছিলেন। এইজন্য তাহার অভাবে কলিকাতার বাঙ্গালী সমাজের এই অংশ অন্যতম ভূষণ হারাইল!”-'প্রবাসী', আষাঢ় ১৩৩১, পঃ ৪৭৫।


 সার্, রাজেন ও লেডী মুখার্জী: সার্ রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং পত্নী লেডী যাদুমণি মুখোপাধ্যায়। ১৮৫৪, জুন মাসে রাজেন্দ্রনাথ চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত বসিরহাট মহকুমার ভাবলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছয় বংসর বয়সে তাঁহার পিতৃবিয়োগ হয়। শৈশব ও কৈশোরে তিনি অতি কষ্টে বিদ্যাভ্যাস করেন। বিপদে-আপদে মা ছিলেন একমাত্র সহায়। কোনরুপে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া রাজেন্দ্রনাথ কলিকাতায় ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে প্রবেশ করেন। তখন এই কলেঞ্জ প্রেসিডেন্সী কলেজের অঙ্গরপে উহারই হাতার মধ্যে অবস্থিত ছিল। কলেজের ত্রৈবার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া তিনি অপরের সঙ্গে অংশীদাররুপে ঠিকাদারী কার্য আরম্ভ করেন। কঠোর পরিশ্রম, অপূর্ব অধ্যাবসায়, আশ্চর্য সততা এবং নিয়মানুবর্তিতার গুণে রাজেন্দ্রনাথ ক্রমে বাবসায়ে উন্নতি করিতে থাকেন। তিনি কলিকাতা, এলাহাবাদ, লক্ষৌ, বারাণসী, পাটনা প্রভৃতি অঞ্চলে জলের কলের ঠিকাদারী করিয়া প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। মার্টিন কোম্পানীর সমান অংশী রপে তিনি ইহাতে যোগ দেন। পরে তিনিই ইহার সম্পূর্ণ মালিক হন। রাজেন্দ্রনাথ বার্ন কোম্পানীর লৌহ-কারখানা ক্রয় করিয়া যান। ইহা এখন একটি বিরাট প্রতিষ্ঠানে পরিণত হইয়াছে। বাবসাক্ষেত্রে রাজেন্দ্রনাথ দেশে ও বিদেশে বিশেষ মর্যাদা লাভ করিয়াছিলেন। ১৯১১ সনের দিল্লী দরবারে তিনি 'নাইট' উপাধি প্রাপ্ত হন। রাজেন্দ্রনাথের দেশহিতৈষণার বিষয় উল্লেখযোগা। তিনি নিজ গ্রামে স্কুল ও হাসপাতাল স্থাপন করেন, কলিকাতা শ্যামবাজারস্থ অনাথ আশ্রম তাঁহারই অর্থ-সাহায্যে এবং প্রত্যক্ষ পরিচালনায় একটি বিশিষ্ট সমাজহিতকর প্রতিষ্ঠানে দাঁড়াইয়াছিল। ‘সোসাইটি ফর ইমপ্রুভমেণ্ট অব ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস্'-এর সঙ্গে তাঁহার যোগ

২২৩