পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অন্য কোন ফাজিল ছোড়া হলে কি উচিত দুকলিকে বলে দিতে হত না, এ বজাতটার কথা ভিন্ন এর ক্ৰোধ আর প্রতিহিংসা কে ঠেকাবে, কিসে ঠেকাবে, ভিটেমাটি ছাড়া করে সপরিবারে তাদের উচ্ছন্নে দেওয়া এর পক্ষে কত সহজ { অন্য দিকে, ভাঙা ঘর দুয়ার যদি নতুন হয়, বাধা জমিটুকু যদি ছাড়ানো যায়, পেট ভরে যদি দুটো খেতে মেলে, গায়ে যদি দুটো শাড়ী গয়না ওঠে-এসব তুচ্ছ করে উড়িয়ে দেওয়াও তো তাদের পক্ষে সহজ নয়! গণেশের ভাঙা কুটির ঘিরে সে রাতটি নামে বিহ্বল, ক্লেদাক্ত, ভয়ানক । অন্ধকার রাত্রির অতল রহস্যের মতই পুঞ্জীভূত ভয় ও লোভের সঙ্গে অসহায় একটি দীনহীন পরিবারের চরম সংগ্রামের রাত। এ জগতে এমন অদ্ভুত এত অসঙ্গত ঘরোয়া সংগ্ৰামও চলে অনুভব করতে পারলে অ্যাটম বোমার সংগ্ৰামী জগতেরও রোমাঞ্চ হত। লাভের হিসাব দূরে থাক, একদিকে প্রায় সৰ্ব্বনাশের সম্ভাবনা, তবু সেই সৰ্ব্বনাশের দিকে ঝুকে সুনিশ্চিত লাভ ও নিরাপত্তার ভরসার সঙ্গে লড়াই করা ! ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিতকে বরাবর তারা প্ৰণাম ঠুকেছে, দেবদেবীকে পূজো দিয়েছে, স্বৰ্গ আর নরক ছাড়া কোন ভবিষ্যৎ তারা জানে না, অথচ সেই বিরাট ঈশ্বরের সেই নিখুঁত বিধি-ব্যবস্থা তাদের এতটুকু কাজে আসে না। সর্বশক্তিমান মেজকৰ্ত্তার ছেলের ভোগে দুকলিকে লাগাবে কি লাগবে না সে পরামর্শে ঘূণাক্ষরে ভগবানের নাম পৰ্য্যন্ত তারা উচ্চারণ করে না। তাদের ঘরোয়া ব্যাপারে, জমিদারের ছেলে তাদের মেয়েটাকে ভোগ করতে চায় এই সমস্যার বিচারে, পাপ-পুণ্যের হিসাব তারা তোলেই না। তারা যেন টের পেয়ে গেছে ও ঈশ্বর বল আর পাপ-পুণ্য বল-ওসব তাদের জীবন-মরণের হিসাব-নিকাশে আসে না । শুধু সমাজ আর অভিজ্ঞতার হিসাব দিয়ে তারা আজ রাতের নৈতিক যুদ্ধ মাৎ করতে চায়। দুকলি প্ৰায় নিৰ্বাক, মাঝে মাঝে দু-একটি কাটা কাটা কথা শুধু বলে, আলোচনার পক্ষে তা-ই যথেষ্ট। দুকলি শুধু তাদের মনে পড়িয়ে দেয় যে সেও আছে, সেও একটা রক্তমাংসের মানুষ। তাতেই কাজ হয়। গোমড়া মুখে ভেবে ভেবে শেষ পৰ্য্যন্ত তারা ঠিক করে, না, এ পথ ভাল নয় । এতে শেষ পৰ্য্যন্ত মঙ্গল হয় না । RVN)