পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঝাঁশির রাণী।
৬১

অত্যন্ত নিরালা, সেই ভাগের একটি দরজা খোলা হইল—তাহার মধ্য দিয়া বিষন্নভাবে, পলাতকদিগের যাত্রার-ঠাট বাহির হইল। রাণী এবং তাহার ভগিনী বা সহচরী, পুরুষ-বেশ ধারণ করিয়া কতকগুলি বাছ-বাছা অনুচরবর্গ সঙ্গে লইয়া, নীরবে, সিংহদ্বার পার হইয়া, বাহিরের ঘোর অন্ধকারে আসিয়া পড়িলেন—মৃদুস্বরে দুই চারিটি ফুসফুস কথা ভিন্ন, আর কারও মুখে কথাটি নাই—অবশেষে শেষ লোকটি পর্যন্ত পার হইয়া গেল—অমনি দ্বার রুদ্ধ ও অর্গলবদ্ধ হইল। প্রাণ হাতে করিয়া পলায়ন করাই সেই রাত্রির ব্যাপার; কেননা, ১৪ সংখ্যক ড্রেগুন-সৈন্যের ইংরাজ অশ্বারোহী পর্যটক-প্রহরীদল এবং হাইদ্রাবাদের কণ্টিজেণ্ট-ফৌজ, সতর্ক ও সজাগভাবে সর্ব্বত্র পাহারা দিতেছিল.; মধ্যে কাহারও সহিত সাক্ষাৎ হইলেই নিশ্চিত মৃত্যু—তাহাতে সন্দেহ মাত্র নাই। এই সকল লোকের হস্ত হইতে রাণী কি করিয়া এড়াইয়া গেলেন, তাহা এ পর্যন্ত জানিতে পারা যায় নাই। কিন্তু রাণীর সঙ্গে ভাল ভাল পথ-প্রদর্শক ছিল, এ কথা সত্য। রাণী একজন নির্ভীক ঘোড়সওয়ার ছিলেন, তিনি অতি দ্রুত। বেগে, আড়ো-খাড়ো পথের মধ্য দিয়া জঙ্গল-প্রদেশে আসিয়া পড়িলেন। এই জঙ্গল-প্রদেশে প্রবেশ করাই, তাহার প্রাণ-রক্ষার একমাত্র উপায়।”

 কর্ণেল ম্যালেসন বলেন “সর-হিউরোজ, ইতিমধ্যে কেল্লা আক্রমণ করিবার বিবিধ বন্দোবস্ত করিতেছিলেন। কিন্তু রাণী সে বিষয়ে আর তাহাকে বড় কষ্ট পাইতে দিলেন না।”

 সে যাহা হউক, রাণীঠাকুরাণী ঝাঁশি হইতে বাহির হইয়া গেলে, তাহার পশ্চাতে তাঁহার যে সৈন্য আসিতেছিল, তাহাদিগের সহিত ইংরাজ- সৈন্যের সাক্ষাৎ হওয়ায় তুমুল যুদ্ধ বাধিয়া গেল। ঝাঁশি-সৈন্যের মধ্যে “মকরাণী” অশ্বারোহিদল যদিও বিলক্ষণ শৌর্য্য প্রকাশ করিয়াছিল, কিন্তু অবশেষে ইংরাজের গোলাগুলি প্রহারে অতিষ্ঠ হইয়া মোরপ-তাঁবে।