পাতা:তত্ত্ববিচার.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
তত্ত্ববিচার।

সমস্ত দিন জলে গাত্র ডুবাইয়া শীতলতা ভোগ করে; কিন্তু আহারাভাবে তাহাদের শরীর শীর্ণ হইতে থাকে। আবার কতকগুণি এরূপ সুচতুর মহিষ আছে যে, তাহারা পঙ্কিল পল্বল মধ্যে প্রবেশ করিয়া তাহাতে লুটাপুটি খায়, ক্ষণকাল পরে পঙ্কলিপ্ত কলেবরে উঠিয়া আসে, এবং ভোজানাদিপূর্ব্বক বিচরণ করিয়া থাকে; শরীরসংলগ্ন পঙ্কের আবরণ ভেদ করিয়া তাপ বা মশক-দংশকাদি তাহাদিগকে কোন ক্লেশ দিতে পারে না। ভক্ত মাহাত্মাগণ! সাধু সেবাপরায়ণ ব্যক্তিগণও এইরূপ ত্রিবিধ ত্রিতাপজ্বালায় সন্তপ্ত হইয়া অনেকে শান্তিলাভ করিবার জন্য সাধুদিগের নিকট উপস্থিত হন; যতক্ষণ সাধুর নিকট বসিয়া তাঁহার বৈরগ্যপূর্ণ উপদেশ শ্রবণ এবং তাঁহার সৌম্যমূর্ত্তি দর্শন করেন, ততক্ষণ তাঁহার মনঃপ্রাণ জুড়াইয়া যায় সত্য, কিন্তু গৃহে ফিরিয়া আসিলেই আবার পুর্ব্ববৎ জ্বালামালায় হৃদয় বিদগ্ধ হইতে থাকে। আর কতকগুলি লোক সংসারকে সম্পূর্ণ ক্লেশের হেতু জানিয়া সর্ব্বদাই সাধুদিগের নিকট থাকেন, গৃহকলত্রাদিসেবনে মনোযোগ দিতে পারেন না; সাধু-সেবায় তাঁহাদের চিত্ত শান্ত হয় সত্য, কিন্তু পরিবারাদির কথা স্মরণ হওয়াতে তাঁহাদিগের সময় সময় চিত্ত-বিক্ষেপ উপস্থিত হয়। আর যাঁহারা অতি সুচতুর, তাঁহারা শ্রদ্ধাপূর্ব্বক সাধুসেবা করিয়া সাধুসঙ্গ-সরোবরে অব্গাহনপূর্ব্বক সাধন-শক্তির কদম হৃদয়ে মাথিয়া, যথাযথরূপে যথাতথা গৃহে ও বাহিরে বিচরণ করিয়া পরমানন্দ ভোগ করিয়া থাকেন।

 সাধু যে স্থানে বাস করেন, তথাকার স্থানীয় প্রকৃতি অতীব নির্ম্মল, আকাশমণ্ডল দিব্যতেজে পরিপূর্ণ; সেখানকার মৃদমন্দ মারুত-হিল্লোলে মন সুশীতল হয়, প্রাণ জুড়াইয়া যায়। সাধুর কাছে উপদেশ না লইলেও ভক্তিপূর্ণ হৃদয়ে তাঁহার নিকটে থাকিলেই তাঁহার