পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (ত্রয়োদশ কল্প তৃতীয় খণ্ড).pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিনি যেন কদাচ বৈরাগ্যকে ত্যাগ করিয়া কেবল প্রাণায়ামের দিকে ধাবিত না হন, কারণ তাহাতে তিনি কদাচ সিদ্ধি লাভে সমর্থ হইবেন না । কেবল বিচার বৈরাগ্য দ্বারা কার্য হইতে পারে কিন্তু বিচার বৈরাগ্য বিহীন প্রাণায়ামের দ্বারা কদাচ কার্ষ্যসিদ্ধি হয় না এই জন্যই শঙ্করাচার্য্য স্পষ্ট লিখিয়া গিয়াছেন, “অর্থস্য নিশ্চয়োদৃষ্টো বিচারেণ ছিতোক্তিতঃ। ন মানেন ন দানেন প্রাণায়ামশতেন বা ॥” বিবেক চূড়ামণিঃ। অর্থাৎ সদস্য বস্তুর বিচার ও গুরুবাক্য দ্বারা পদার্থের নিশ্চয় দৃষ্ট হয় কিন্তু স্নান দান ও শত শত প্রাণায়াম দ্বারা উহ। কখন হয় না। এস্থলে একটা কথা বলা আবশ্যক ষে যোগের বহিরঙ্গ প্রাণায়াম অভ্যাস করিতে হইলে অভ্যাসকর্তার নীরোগ শরীর হওয়া আবশ্যক নচেৎ রুগ্ন শরীরে প্রাণায়াম দ্বারা অনেক সময়ে বিঘ্ন ঘটিতে দেখা যায়। যোগবাশিষ্ঠ রামায়ণে মন নিগ্রহ সস্বন্ধে অনেক প্রমাণ লিখিত আছে । তন্মধ্যে দুই চারিটি এস্থলে উদ্ধত করিতেছি যথা ঃ— “শাস্ত্রসঙ্গমতীক্ষুেণ চিন্তাতপ্তমতাপিনী । ছিদ্ধি ত্বময়সেবায়ে মনসৈব মুনে মন । তস্য চঞ্চলতাঘৈষা ত্বা বদ্যা রাম সোচ্যতে । তামেব বাসনানামীং বিচারেণ বিনাশয় ॥ মন এব সমৰ্থং স্যাৎ মনসে দৃঢ়নিগ্রহে । অরাজ কঃ সমর্থঃ স্যাদ্রাজ্ঞো রাঘব নিগ্রহে ॥ সমতা শান্ত নেনাপ্ত ন দ্রাগিতি শনৈ: শনৈঃ । পৌরুষেণ প্রষত্ত্বেন লালয়েচ্চিত্তবালকম ॥” অর্থাৎ হে মুনে ! যেমন একটি লৌহ দ্বারা অপর লৌহ ছিন্ন হইয়া থাকে তাহার ন্যায় তুমি শাস্ত্রচর্চার সাহায্যে তীক্ষ তাপবিরহিত মন দ্বারা মনের ছেদ বিধান করিবে । হে রাম, মনের যে চঞ্চল | 8ማ শক্তি তাহাকেই পণ্ডিতেরা অবিদ্যা সংজ্ঞা প্রদান করেন, তুমি বাসনা নাম্নী সেই অবিদ্যাকে বিচার দ্বারা লিনাশ কর । হে রাঘব, মনই কেবল মনের নিগ্ৰহ-কারণ, যিনি রাজা নহেন তিনি কি কখন অন্য রাজাকে নিগ্ৰহ করিতে পারেন ? মন রূপ শিশুকে যত্ন পূর্বক পৌরুষ দ্বারা অল্পে অল্পে শান্ত করিয়া লালন পালন করা উচিত, এককালে বাধ্য করিবার চেষ্টা করা কর্তব্য নহে । এই জন্যই মনুসংহিতাতে স্পষ্ট লিপি ত আছে,

  • ন ভথৈতানি শক্যস্তে সংনিয়ন্তুমসেবয়া । বিষয়েযু প্রজুষ্টানি যথা জ্ঞানেন নিত্যশ: ॥” অর্থাৎ জ্ঞানালোচনা দ্বারা যেরূপ ইন্দ্রিয়গণ ক্রমে ক্রমে উপশান্ত হয় বিষয় উপভোগ করিতে না দিয়া কেবল বলপূর্বক তাহাদিগকে নিবৃত্তি করিবার প্রয়াস পাইলে তদ্রুপ হয় না । মনঃসংযমী পুরুষ যে আনন্দ উপভোগ করেন তাহ অবিবেকী ব্যক্তি কদাচ প্রাপ্ত হইতে পারে না, কারণ অবিবেকী ব্যক্তির আt

পন অবশীভূত ইন্দ্রিয়গণই তাহার দুঃখের কারণ হইয়া থাকে । উপনিষদে লিখিত আছে যে, “যস্ত, বিজ্ঞানবান ভবত্যযুক্তেন মনসা সদা । তস্যেন্দ্রিয়াণ্য বশ্যানি দুষ্টাশ্বাইব সারণে ঃ ॥ যস্তু বিজ্ঞানবান ভবতি যুক্তেন মনসা সদা । তস্যেন্দ্রিয়াণি বশ্যানি সদশ্বাইব সারথে P ॥ অর্থাৎ যে ব্যক্তি অবিবেকী ও যাহার মন অবশীভূত তাহার ইন্দ্রিয়গণ সারথির দুষ্ট অশ্বের ন্যায় বশে না থাকিয়া বিপদগ্রস্ত করে। যে ব্যক্তি জ্ঞানবান এবং স্ববশচিত্ত তাহার ইন্দ্রিয়গণ সারথির বশীভূত অশ্বের ন্যায় বশীভূত থাকে। এই জন্যই শাস্ত্রে লিখিত আছে,