পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (ত্রয়োদশ কল্প প্রথম খণ্ড).pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᎼNᏬ তত্ত্ববোধিনী পত্রিক ১৩ কল্প, ১ ভাগ পরিচালিত হইয়া বঙ্গে একটা যুগান্তর আনয়ন করিয়াছিল । ইহা জ্ঞানালোক ও ধৰ্ম্মালোকে লোকের যারপর নাই উপকার করিয়াছিল । বিদ্যাসাগর মহাশয় ইহাতে মহাভারত অনুবাদ করিতেন । এবং এই পত্রিকায় যে সমস্ত প্রবন্ধ প্রকাশিত হইত তাহার সংশোধনের ভার তাহারও হস্তে ছিল । ফলত তত্ত্ববোধিনী দ্বারা এক সময় যে বঙ্গ ভাষার অসাধারণ উন্নতি হইয়াছিল তাহাতে বিদ্যাসাগরের অনেকটা সহাযত৷ ছিল। আজ ইহঁর অভাবে সমস্ত ভারতবর্ষ হাহাকার করিতেছে । ইনি দীন দরিদ্রের পিতা মাতা । কোন মহাত্মা | কহিয়াছেন তোমার দক্ষিণ হস্ত যাহা । করিবে বাম হস্ত যেন তাহা জানিতে না পারে । কথা সম্পূর্ণ ই খাটে। তিনি চির জীবন অকাতরে দীনদুঃখীকে বিস্তর দান করিয়াছেন কিন্তু তাহ কেহই জানিতে পারিত না । বিদ্যাসাগর বঙ্গভাষার পিতা । রাজা রামমোহন রায় অবশ্য বাঙ্গলায় গদ্য রচনার প্রথম সূত্রপাত করিয়া যান কিন্তু বিদ্যাসাগরের হস্তে ইহা নবজীবনে উত্থিত হয় । এখন যে ভাষার এতদূর উন্নতি হইয়াছে বিদ্যাসাগরই তাহার মূল । তিনি যে সমস্ত পুস্তক প্রস্তুত করিয়া গিয়াছেন বঙ্গের শিশু হইতে বৃদ্ধটা পৰ্য্যন্ত তদ্বারা উপকার পাইতেছে । বিধবা বিবাহ ব্যবস্থা র্তাহার প্রগাঢ় বিদ্যাবত্তা ও বুদ্ধিমত্তার বিশেষ পরিচায়ক । তিনি বুঝিয়াছিলেন ইংরাজী শিক্ষা বহুল পরিমাণে প্রচলিত না হইলে এই অধঃপতিত জাতির উন্নতি নাই । তাই তিনি অল্পব্যয়ে উচ্চ শিক্ষ। পাইবার জন্য অনেক গুলি বিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছেন। তন্মধ্যে র্তাহার সর্বপ্রধান কীৰ্ত্তি মেট্রোপলিটান ইনিষ্টিটিউসন। এই সমস্ত । বিদ্যাসাগরের দান সম্বন্ধে এই | - - Er b বিদ্যালয়ের দ্বারা বঙ্গদেশের যে প্রচুর উপকার হইতেছে ইহা সকলেই মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করিয়া থাকেন। তিনি অত্যন্ত অমায়িক লোক ছিলেন । যিনি একবার তাহার সংশ্রবে আসিয়াছেন তিনি কিছুতেই তাহাকে ভুলিতে পারিবেন না । তাহার চিত্ত আতিশয় স্বাধীন এবং তাহার অধ্যবসায়ও অসাধারণ ছিল । যে সমস্ত সৎগুণ থাকিলে লোকে প্রকৃত মনুষ্য হইতে পারে তাহাতে তাহার কিছুমাত্র অভাব ছিল না। আমরা এত দিনের পর আমাদের এমন এক প্রাচীন বন্ধু ও সহযোগীকে হারাইয়া আজ যার পর নাই দুঃখিত হইয়াছি এবং র্তাহার অভাবে বঙ্গদেশ সমগ্র ভারতবর্ষ অন্ধকার হইয়াছে । ডাক্তার রাজেন্দ্রলাল মিত্র উচ্চ ও সন্ত্রান্ত বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন । র্তাহার অসাধারণ প্রতিভা ছিল। ইংরাজী পারদী সংস্কৃত প্রভূতি অনেকগুলি ভাষায় র্তাহার পারদর্শিতা ছিল । তিনি যেমন বক্তা তেমনি লেখক । “আণ্টিকুইটি অফ উড়িষ্যা প্রভৃতি অনেকগুলি ইংরাজী গ্রন্থ র্তাহার কীৰ্ত্তিস্তম্ভ। তিনি বাঙ্গালা ভাষারও যথেষ্ট উপকার করিয়াছেন । এক সময়ে তাহার ‘বিবিধার্থসংগ্রহ’ আতি আদিরের সহিত এদেশে পঠিত হইত। ইওরোপে পণ্ডিতমণ্ডলীতে ইহঁার যার পর নাই প্রতিষ্ঠা। লুপ্তপ্রায় অনেক সংস্কৃত গ্রন্থের ইনি উদ্ধার করিয়া গিয়াছেন । ইনি অতি তেজস্বী ও সাহসী ছিলেন । ন্যায়রক্ষার জন্য কাহাকেই দৃকপাত করিতেন না । ফলত বিদ্যাসাগর ও রাজেন্দ্রলাল এই দুই জন ভারতের বস্তুতই কৃতী সন্তান । এই দুই জনই সুশিক্ষিত ও পরহিতব্ৰতে নিরত ছিলেন ।