পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (ত্রয়োদশ কল্প প্রথম খণ্ড).pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ե-8 তত্ত্ববোধিনী পত্রিক ১ ও কল্প, ১ ভাগ কৃষ্ণ এই দুইটি বর্ণ যে কি পরিমাণ অমৃত দিয়া গঠিত হইয়াছে তাহ জানি না। যখন ইহা রসনাতে নৃত্য করিতে থাকে, তখন আরও বহুরসন লাভ করিতে ইচ্ছা হয়, যখন কর্ণরন্ধে অঙ্কুরিত হয়, তখন অৰ্ব্বদ সংখ্যক কৰ্ণ পাইবার জন্য স্পৃহা জন্মে, এবং চিত্তপ্রাঙ্গণে প্রবিষ্ট হইলে সমুদায় ইন্দ্রিয়ব্যাপার ইহার নিকট পরাস্ত হইয়া যায়। এই মাধুর্য্য-রসসিঞ্চিত হরিনাম-মাহাত্ম্য-ব্যঞ্জক অপূর্ব শ্লোক পাঠ করিতে করিতে প্রেমরসময় গৌরচন্দ্র প্রেমাবিষ্ট হইয়া পড়িলেন। হরিদাস উল্লাসে নৃত্য করিতে করিতে বলিলেন, শাস্ত্র ও সাধুমুখে নামমাহাত্ম্য শ্রবণ করিয়াছি, কিন্তু এমন সুধামাখা নাম-মহিমা কখনও শুনি নাই । আর এক দিন গেীরস্থন্দর, সাৰ্ব্বভৌম ভট্টাচাৰ্য্য রায় রামানন্দ ও স্বরূপ প্রভূতি ভক্ত পণ্ডিতগণে পরিবৃত হইয়া রূপের সন্নিধানে আসিলেন। গৌরের মুখে রূপের । প্রশংসা আর ধরে না, সমস্ত পথ ভক্তগণ । সমীপে রূপের গুণ বর্ণনা করিতে লাগিলেন । ভক্তবৃন্দসহ প্রভুকে দেখিয়া রূপ ও হরিদাস সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করিয়া তাহাদিগকে পিড়ার ওপরে বসাইলেন এবং আপনার ভূমিতলে উপবিষ্ট হইলেন। চৈতন্য প্রভু বলিলেন, রূপ ! সেই অমৃতময় শ্লোক আবার পড়.। রূপ গোসাঞি বিনয়ে অধোবদন, লজ্জাতে পড়িতে না পারিয়া মৌনভাব অবলম্বন করিলেন। শেষ্ণু, গেীরের পুনঃপুনঃ অনুরোধে বিদগ্ধমাধব নাটকের সেই শ্লোক আবার পাঠ করিলেন । শ্ৰীকৃষ্ণের নামমাহাত্ম্যযুক্ত কবিত্ব রসপূর্ণ শ্লোকের রসাস্বাদন করিয়া রামানন্দ প্রমুখ ভক্তগণ আনন্দ ও বিস্ময়ে উৎফুল্ল হইয়। বলিতে লাগিলেন, এমন মধুময় নামমহিমা আমরা কখন শুনি নাই । রায় রামানন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন, “—কোন গ্রন্থ কর হেন জানি । যাহার ভিতরে এই সিদ্ধান্তের খনি।” স্বরূপ গোস্বামী রামানন্দকে নাটকের পরিচয় অবগত করিলে, রায়ের অনুরোধে ব্লপি বিদগ্ধমাধব ও ললিতমাধব নাটকের স্থানে স্থানে পাঠ করিয়া শুনাইতে লাগিলেন । প্রথমতঃ বিদগ্ধ মাধবের নান্দীশ্লোক পাঠ করা হইল । "সুধানাং চান্দ্রীণামপি মধুরিমোন্মাদদমনী দধান। রাধাদি প্রণয়ঘনসারৈ: সুরভিতাং । সমস্তাং সন্তাপোদগমবিষম সংসার সরণী প্রণীতাং তে তৃষ্ণাং হরতু হরিলীলাশিখরিণী।” যাহাতে স্থধাংশুর স্থধামাধুর্য্যশালিতাঁর গৌরব দমিত হইযাছে, এবং যাহা রাধাদির প্রণয়রূপ কপূর সংযোগে সৌগন্ধ্য ধারণ করিয়াছে, সেই হরিলীলা-শিখরিণী অর্থাৎ হরিলীলারূপ মধুরাস্বাদযুক্ত পানীয় তোমার সন্তাপ-বৰ্দ্ধক অতিদুর্গম সংসাররূপ-পথ-পর্য্যটন-জনিত তৃষা নিবারণ করুক। এই রূপে প্রেমোৎপত্তি, পূৰ্ব্বানুরাগ, বি কার চেষ্টা, ভাব ও প্রেমের লক্ষণ ইত্যাদি যে রসের যেরূপ প্রেমরসাভিষিক্ত কবিত্বময় শ্লোক রচনা করিয়াছিলেন, রূপ গোস্বামী নাটকের মধ্যে মধ্যে পাঠ করিয়া ভক্তগণকে তাহ শুনাইতে লাগিলেন। পূর্বকথিত দুইখানি নাটকের নান্দীতে রূপ গোস্বামী ইষ্টদেব বন্দনার যে শ্লোক রচনা করেন, চৈতন্যের ভয়ে তিনি তাহ পাঠ করিতে সঙ্কুচিত হইলেন । এই দুই শ্লোকে আপন ইষ্টদেব শ্রীচৈতন্যের বর্ণনাচ্ছলে চৈতন্যাবতারের আভাস প্রদান করা হইয়াছিল। ঈশ্বরাবতার রূপে বর্ণনা ত দূরের কথা শ্রীচৈতন্য আপনার সামান্য প্রশংসাও সহ্য করিতে পারিতেন না। তৃণ