পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (নবম কল্প তৃতীয় খণ্ড).pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

४छाई ०१aa বুদ্ধি অনুসারে কার্য্য না করিলে সিদ্ধি প্রাপ্ত হওয়া যায় না । ভগবদগীতা পাঠ করিলে এইরূপ বোধ হয় যে উহার প্রণেতা একটি স্বমহৎ ধৰ্ম্মপরিবর্তন সাধন করিতে চেষ্টা পাইয়াছিলেন । বেদান্ত-দর্শন ঈশ্বরকে এরূপ নিগুৰ্ণ ও অনির্বচনীয়-স্বরূপ করিয়া বর্ণনা করিয়াছিলেন যে,তাহাকে উপাসনার অতীত করিয়া ফেলিয়াছিলেন। ভগবদগীতা-প্রণেত তাহাকে পিতা মাতা ও সুহৃৎ রূপে বর্ণনা করিয়া উপাসনাগম্য করিয়াছেন । বেদান্ত-দর্শনে কেবল জ্ঞানের কথা পাওয়া যায়; প্রীতি ও ভক্তির কথা অতি অল্প পাওয়া যায় । ভগবদী হাতে প্রীতি ও ভক্তির কথা যথেষ্ট পাওয় যায় ! পাতঞ্জল দর্শন কেবল যোগ করিতে উপদেশ দিয়াছিলেন; মীমাংসা কেবল কৰ্ম্ম করিতে উপদেশ দিয়াছিলেন । এই জন্য মীমাং সা-দর্শনকার জৈমিনি আপনার গ্রন্থের প্রথমে কেবল কৰ্ম্মকে প্রধান দেবতা বলিয়। তাহাকে নমস্কার করিয়াছেন, কিন্তু ভগবদগীতা যোগের সহিত কাৰ্য্যসংযোগ করিতে উপদেশ দেন। বোধ হইতেছে যে, ভগবদগীত-প্রণেতার কালে দর্শন-শাস্ত্রের আলোচনা অত্যন্ত প্রবল হইয়া উঠিয়াছিল, তিনি দার্শনিক মতের সামঞ্জস্য বিধান এবং দার্শনিক আলোচনার অনিষ্ট নিবারণ জন্য গীত রচনা করিয়াছিলেন । শুদ্ধ দৰ্শনশাস্ত্রের আলোচনার অনিষ্ট নিবারণ জন্য যে তিনি গীত রচনা করিয়াছিলেন এমৎ নহে । তাহার সময় বেদের প্রতি লোকের অন্ধ নির্ভর ছিল । কোন বিশেষ ধৰ্ম্মগ্রন্থের প্রতি অন্ধ নির্ভর ধৰ্ম্মবিষয়ে মনকে যেমন বদ্ধ ও হীনভাবাপন্ন করে এমন আর অন্য কিছুই নহে। ভগবদগীতা-প্রণেতা বেদের প্রতি অজ্ঞানোচিত অন্ধ নির্ভর হইতে মানব মনকে বিমুক্ত করিতে চেষ্টা পাইয়াছিলেন ভগবদগীত। বিষয়ে বক্ততা > * যে হেতু তাহীতে এমন সকল শ্লোক দেখিতে পাওয়া যায়। যথা . যদা তে মোহকলিলং বুদ্ধিৰ্যতিতরিষতি t তদা গন্তাসি নিবেদং শ্রোতব্যস্য শ্রাতস্য চ || ২য়, ৫২ “যখন তোমার বুদ্ধি মোহ-সমূহের অতীত হইবে তখন তুমি শ্রোতব্য ও শ্রুত সম্বন্ধে বৈরাগা লাভ করিবে ।” বেদের সময় ব্রহ্মজ্ঞানের প্রতি স্ত্রী শূদ্রের অধিকার ছিল এমং প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া যায়, কিন্তু ভগবদগীতার কালে ব্রহ্মজ্ঞানের প্রতি স্ত্রী শূদ্রের অধিকার আদোবে নাই লোকের মনে এই বিশ্বাস প্রবল হইয়া উঠিয়াছিল। ভগবদগীতা-প্রণেতা এই বিশ্বাস অপনোদন করিবার চেষ্টা পাইয়াছিলেন এই জন্য তাহাতে এই সকল শ্লোক দৃষ্ট इग्न । यथ। সিয়োবৈশ্যাস্তথা শূদ্রাস্তেপি যান্তি পরাং গতিং ৯ম,৩২ “স্ত্রী, বৈশ্য ও শূদ্র ও ঈশ্বরের উপাসনা দ্বার সদগতি প্রাপ্ত হয় ।” বেদের প্রতি একান্ত নির্ভর ও ব্রহ্মজ্ঞানে স্ত্রী শূদ্রের আদেবে অধিকার নাই এই বিশ্বাস লোকের মন হইতে উঠাইবার জন্য নিজ বেদ হইতে ভগবদগীতা পোষকতা প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, যেহেতু নিজ বেদে “অপর ঋগ্বেদঃ” ইত্যাদি শ্লোক প্রাপ্ত হওয়া যায় এবং মৈত্রেয়ী, গাগী প্রভৃতি স্ত্রীলোকদিগের ব্রহ্মজ্ঞানে অধিকার দৃষ্ট হয়। এক্ষণে আমর। ভগবদগীতা অন্য দেশের ধৰ্ম্ম-গ্রন্থ অপেক্ষ কি কি বিষয়ে শ্রেষ্ঠ তাহা বলিতে প্রবৃত্ত হইতেছি । প্রথমতঃ, ঈশ্বরস্বরূপের এরূপ সুমহৎ বর্ণনা অন্য দেশের ধৰ্ম্ম-গ্রন্থে পাওয়া সুকঠিন । অন্যান্য দেশের ধৰ্ম্ম-গ্রন্থে ঈশ্বরের তটস্থ লক্ষণের অর্থাৎ জগৎকার্য্যে প্রকাশিত তাহার জ্ঞান শক্তি করুণ এবং জগতের উপর তাহার কর্তৃত্ব ভাবের অনেক মহৎ বর্ণনা পাওয়া যায়;