পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (নবম কল্প তৃতীয় খণ্ড).pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հ Ե কিন্তু ঈশ্বরের স্বরূপ লক্ষণের এরূপ মহৎ বর্ণনা পাওয়া যায় না । যাহারা ঈশ্বরকে জগতের একটী বিশেষ স্থান অর্থাৎ স্বগে বিশেষরূপে প্রকাশিত বলিয়া বিশ্বাস করেন, তাহাদিগের নিকট হইতে র্তাহার স্বরূপলক্ষণের অর্থাৎ তাহার অনন্তত্ব ও অনিবর্বচনীয়ত্বের এতদ্রুপ সুমহৎ বর্ণনা কি প্রকারেই বা প্রত্যাশ করা যাইতে পারে ? দ্বিতীয়তঃ, অবাতকম্পিত দীপশিখাবৎ মহোচ্চ ব্রহ্মযোগের কথা অন্য দেশের ধৰ্ম্ম-গ্রন্থে আদোবেই পাওয়া যায় না। তৃতীয়তঃ,শান্তিসাধনের বিষয়েও ভগবদগীতার ন্যায় এরূপ তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা সুমহৎ উপদেশ আর কোথায় পাওয়া যায় না। ; খৃষ্টীয় ধৰ্ম্ম শান্তিসাধক ধৰ্ম্ম নহে। খৃষ্ট যে শান্ত প্রকৃতির লোক ছিলেন না তাহ তাহার অভিশাপাদিতে এবং জের জেলমস্থ ঈশ্বরোপাসনালয়ের দ্বারস্থিত বণিকদিগের প্রতি ব্যবহারেতেই প্রকাশ পাইতেছে । তাহার ও দেশীয় থষ্ট গৌরাঙ্গের আদর্শে আমাদিগের দেশের কোন কোন ধৰ্ম্মপ্রচারকের ধৰ্ম্মোন্মক্ততার ভাব প্রচার করিতে চেষ্টা করিতেছেন ইহ কোন মতেই শ্রেয়স্কর বোধ হয় ন । উন্মত্ত উপাসনার মত্ততার পরে মন অবসাদদশা প্রাপ্ত হয় । এই অবস্থাতে মন শুষ্ক ও ধৰ্ম্মোৎসাহশূন্য হয় । উন্মত্ততার পর অবসাদ, অবসাদের পর পুনরায় উন্মত্ততা এরূপ করিলে কোন কালেই সাধন হয় না, অতএব প্রকৃত যোগাভ্যাসের প্রতি উন্মত্ত উপাসন যেরূপ ব্যাঘাতজনক এরূপ আর অন্য কিছুই নহে। উন্মত্তসাধন অপেক্ষা শান্তসাধন যে ধৰ্ম্মসিদ্ধি লাভের প্রতি অধিক উপযোগী তা চার আর সন্দেহ নাই। এই জন্য আমাদিগের | প্রাচীন ঋষির উপদেশ দিয়াছিলেন যে শাস্ত ভাবে ঈশ্বরের উপাসনা করিবেক । “শাস্তু উপালীত ।” চতুর্থতঃ, কৰ্ম্মফলকামনা পরিত্যাগ করিয়া কেবল ঈশ্বরোদেশে, কৰ্ম্ম করার • कत्र, a छन। বিষয়ে ভগবদগীতাতে যেরূপ উপদেশ প্রাপ্ত হওয়া যায় এমন অন্য কোন দেশের গ্রন্থে প্রাপ্ত হওয়া যায় না। পঞ্চমতঃ,ভগবদগীতার উপদেশে যেরূপ ঔদার্য্য পরিলক্ষিত হয় এমন অন্য দেশের ধৰ্ম্ম-গ্রন্থে পরিলক্ষিত হয় ন। এ বিষয়ে আমি কিছু বিশেষ করিয়া বলিতে ইচ্ছা করি। ভগবদগীতার মতে মনুষ্য যেখানে যে প্রকারে দেবোপাসনা করিতেছে সে ঈশ্বরেরই উপাসনা করি তেছে । যে যথা মাং প্ৰপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহং মম বক্স মুবৰ্ত্তস্তে মনুষ্যা পার্থ সৰ্ব্বশ: থ, ১১ “যে যে প্রকারে আমাকে ভজনা করে আমি সেই প্রকারে তাহাকে অনুগ্রহ করি। হে পাৰ্থ! সকল মনুষ্যই আমার পথে অনুবৃত্তি করিতেছে।” সকল ধৰ্ম্মে অল্প বা অধিক পরিমাণে সত্য আছে । এই জন্য এখানে উক্ত হুইয়াছে যে সকলে ঈশ্বরের পথে অনুবৃত্তি করিতেছে । ভগবদগীতার অনেক স্থানে উল্লেখ আছে যে ব্রহ্মজ্ঞান সকল পথ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ । অন্যান্য দেশের ধৰ্ম্মগ্রন্থ পৌত্তলিকতার প্রতি যেরূপ বিদ্বেষভাব প্রকাশ করে ভগবদগীতা সেইরূপ প্রকাশ করেন না। ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করিয়া পৌত্তলিকের ন্যায় আচরণ করা দোষ, কিন্তু অজ্ঞানত বশতঃ যাহার পরিমিত দেবদেবীতে আন্তরিক বিশ্বাস আছে তাহার পক্ষে পৌত্তলিকতা দোষ নহে। মনুষ্য অপূর্ণস্বভাব, সে অনন্তস্বরূপ পূর্ণ ব্রহ্মকে সম্যক রূপে ধারণ করিতে পারে না,অতএব অজ্ঞান মনুষ্যেরা যে পরিমিতরূপে ঈশ্বরের উপাসনা করিবে ইহার আশ্চৰ্য্য কি ? ভগবদগীতার আখ্যায়িকানুসারে শ্ৰীকৃষ্ণ ঈশ্বরস্বরূপে যখন অৰ্জ্জুনকে তাহার বিরাট অর্থাৎ অনম্ভমূও দেখাইলেন তখন অৰ্জুন সেই অনন্তমূৰ্ত্তি ধারণা করিতে না পরিয়া আকুল