পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণান্ধুর SS অনেকে পাহাড়ের ওপর বেড়াতে এসেচেন । এত সুন্দর হাওয়া -একথায় মনে হোল বাল্যকালে মডেল ভগিনী বইয়ে এই নন্দন পাহাড়ের হাওয়ার কথা পড়েছিলুম-চারিধারে বনতুলসীর জঙ্গলের মধ্যে বসে ডিগরিয়া পাহাড়ের আড়ালে অস্তমান সুৰ্য্যের দিকে চোখ রেখে কত কথাই মনে আসছিল। উপেনবাবু ও দ্বিজেনবাবুর অবিশ্রান্ত বকুনির দিকে আমার व्लक्रा छिब्ल ब्ा । হঠাৎ মনে হোল আজ আমাদের প্রাণেও বিজয়া দশমী । সারা বাংলাতে আজি এসময়টাতে কত নদীতে কত বাচ খেলার উৎসব, কত হাসিমুখ । আমাদের গ্রামের বঁাওড়ের ধারেও এতক্ষণ বিজয়ার আড়ং চলচে-এতক্ষণ রাঙ্গা ময়রা তেলে ভাজা জিলেপি বিক্ৰী করচে-সবাই নতুন কাপড় পরে সেজে এসে বাওড়ের ধারে দাড়িয়ে আছে ঠাকুর দেখবার জন্যে । ছেলেবেলার মত বাওড়ে বাচ হচ্চে। মনে পড়ে অত্যন্ত শৈশবের সেই শালুক ফুল তোলা, তারপরে বড় হয়ে এক দিনের সেই বন্ধুর কাছে চার পয়সা ও মুড়কির কাহিনিটা । ফিরে আসতে আসতে মনে হোল এতক্ষণ আমাদের দেশে পথে পথে, নদীর ধারে প্রিয় পাড়াগায়ের সুপরিচিত ভাট-শেওড়ার বনে অপরাত্নের ছায়া ঘনিয়ে এসেচে, সেই কটুতিক্ত অপূৰ্ব্ব সুভ্ৰাণ উঠচে-সেই পাখীর ডাকএখানকার মত দূরপ্রসারী, উচ্চাঙ্গ পাথুরে জমি ও শাল মহুয়া পলাশের বন সেখানে নেই, এরকম পাহাড়ে নেই স্বীকার করি কিন্তু সে সব অপূর্ব মধুর আরামই বা এখানে কোথায় ? মনে পড়ে বহুকাল পূর্বে এই সময়েই শৈশবের সে “মাধবী কঙ্কন” ও “জীবন প্ৰভাত”-সেই পাকাটীর আঁটি ও দিয়ে-পুকুর। বইখানা সেদিন শ্যামাচরণ দাদার কাছে চেয়ে নিয়ে এলুম। সেসব দিনের অপূর্ব মধুর স্মৃতি-সারাজীবন অদৃশ্য ধূপবাসের মত ঘিরেই রইল। এই নিয়েই তো জীবন-এই চিন্তাতে, এই স্মৃতিতে, এই যোগে । এই মনন ও ধ্যান ভিন্ন উচ্চ জীবনানন্দ লাভ করবার কোনো উপায় নেই। এ আমার জীবনের পরীক্ষিত সত্য । নন্দন পাহাড় থেকে ফিরে এসে দেখলুম অমর বাবুর বাংলোতে ৮ বিজয়ার সম্মিলনী বসেচে। গোল চাতালটাতে জ্যোৎস্নার আলোতে চেয়ার পেতে বিমান বাবু, রবি বাবু, অমর বাবু, করুণা বাবু সবাই বসে আছেন। বিজয়ার আলিঙ্গন ও কুশলাদির আদান প্ৰদানের পূরে চা ও খাবার খাওয়া হোল ।