তৃণান্ধুর R& আর ঘটে উঠল না। পিসিমার শ্বশুরবাড়ী ছিল চৌবেড়ে। নিবারণ রাখালী পিসিমার ভাই, ভারী সুন্দর দেখতে ছিল-কালেরাতে মারা যায় আঠারো বছর বয়সে। সাইমাদের বাড়ীতে আসার ওই পথটাতে প্ৰকাণ্ড এক বকুল গাছ নাকি ছিল—তার তলায় অনেক লোক বসতো। হরি ঠাকুরদাদা মাকে খেতে দিতেন না, মায়ের সঙ্গে ভিন্ন ছিলেন, তার দেওর গোঁসাই বাড়ী ঠাকুর পূজো। করে দু’। পাচ টাকা। যা জমাতো, তাই দিয়ে দরিদ্র বৃদ্ধাকে ধান কিনে দিয়ে যেতো । বৈকালে নলে জেলের নৌকাতে বেড়াতে গেলুম মোল্লাহাটীর দিকে। ছ’টার সময় আমাদের ঘাট থেকে নৌকাখানা ছাড়া হোল। নদীর দুধারে অপরূপ শোভা, কোথাও বাবলা গাছ ফুলের ভারে নত হয়ে নদীর ধারে বুকে আছে, দুধারে ঘাস-ভরা নিৰ্জন মাঠ, ঝোপে ঝাড়ে ফুল ফুটে আছে, গাঙ, শালিকের দল কিচ কিচ করচে, বা ধারে ক্রমাগত জলের ধারে ধারে নলবন, ওকুড়া ও বন্তে বুড়োর গাছ-মাঝে মাঝে চাষীদের পটােল ক্ষেত, বেলেডাঙার ঘোষেরা যে নতুন ক্ষেতটাতে পটোল করেচে, তাতে টােকা মাথায় উত্তরের মজুরেরা নিড়েন দিচ্চে, ওদিকে কুমড়োর ক্ষেত—ঢালু সবুজ ঘাসের জমি জলের কিনারা ছয়ে আছে, গরু চরছে, বাকের মোড়ে দূরে খাব রাপোতা গ্রামের বঁাশবন, সুবৃহৎ ]yre পক্ষীর পুচ্ছদেশের মত নতুন বঁাশের আগা-একটু একটু রোদ মাখা । নদীজলের ঠাণ্ড ঠাণ্ডা গন্ধ বেরুচে, মাথার ওপরকার আকাশ ঘন নীল, কিন্তু পশ্চিমদিগন্তে গ্রাম সীমায় শিমূল, কদম গাছের মাথায় মাথায় অপরূপ মেঘস্তুপ, মেঘের পর্বত—মেঘের গিরিবত্বের ফাকটা দিয়ে অস্তসূৰ্য্যের ওপারের দেশের খানিকটা যেন দেখা যায় । খানিকটা গিয়ে একধারের পাড় খুব উচু, বন্য নিমগাছের সারি, পাড়ের ধারে গাঙ, শালিখের গৰ্ত্ত, নীল মাছরাঙা পাখী শেওলার ধারে ধারে মাছ খুজতে খুজতে একবার ওঠে, একবার বসে-খেজুৱগাছ, গাবভেরেণ্ডা, বৈঁচি, ফুলে ভৰ্ত্তি সাই বাবলা, আকন্দের ঝোপ, জলের ধারের নলবন, কাশ, ষাড়া, নোনা, গুলঞ্চলতা-দোলানো শিমূল গাছ, শালিখা পাখী, খেকশিয়ালী, বঁাশঝাড়, উইঢিবি, বনমূলার ঝাড়, বকের দল, উচু ডালে চিলের বাসা, উলুঘাস, টােকাপানার দাম। সামনেই । কঁচিকাটার খেয়াঘাট, দুখান ছোট চালা ঘর,
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫
অবয়ব