ইন্দু অগ্রসর হইবার উপক্ৰম করিতেই কহিল, দাড়াও ত বৌ, তুমি সম্পর্কে বড়, একটা প্ৰণাম করি। G9 সেদিন সন্ধ্যা হইতেই সমস্ত আকাশ ঝাপিয়া মেঘ করিয়া বৃষ্টি পড়িতে লাগিল। ইন্দু মেয়ে লইয়া বিছানায় আসিয়া শুইয়া পড়িল । আজ তার ছোট-ভগিনীপতি আসিয়াছিলেন, পাশের ঘর হইতে তঁহাকে খাওয়ানো-দাওয়ানো গল্প-গুজনের অক্ষুট কলধ্বনি যতই ভাসিয়া আসিতে লাগিল, ততই কিসের অব্যক্ত লজ্জায় তাহার বুক ভরিয়া উঠিতে লাগিল । তিন মাস হইতে চলিল, সে মেদিনীপুরে আসিয়াছে ; ছোট- ” ভগিনীও আসিয়াছে। তাহার স্বামী এই দুই মাসের মধ্যে শান্তিপুর হইতে অন্ততঃ পাঁচ-ছয়বার আসা-যাওয়া করিলেন, কিন্তু নরেন্দ্ৰ একটিবারও আসিলেন না, একখানি চিঠি লিখিয়াও খোজ করিলেন না। কিছুদিন হইতে ব্যাপারটার উপর সকলের দৃষ্টি পড়িয়াছে এবং প্রায়ই আলোচনা হইতেছে। ছোট-ভগিনীপতির ঘরে সকলের সম্মুখে পাছে এই কথাটাই উঠিয়া পড়ে, এই ভয়েই ইন্দু অসময়ে পলাইয়া ঘরে ঢুকিয়াছিল। স্বামী আসেন না। ভঁাতার অবহেলায় বেদনা কত, সে ইন্দুর নিজের কথা -সে। যাক । কিন্তু ইহাতে এত যে ভয়ানক লজা, এ-কথা সে ত একদিনও কল্পনা করে নাই । ভ্ৰাণহত্যা, নরহত্যার মত এ যে কেবল লুকাইয়া ফিরিতে হয়। মরিয়া গেলেও যে কাঠারো কাছে স্বীকার করা যায় না, স্বামী ভালবাসেন না ! এতদিন স্বামীর ঘরে স্বামীর পাশে বসিয়া ঠাহাকে টানিয়া পিটিয়া নিজের সন্ত্রম ও মৰ্য্যাদা বাড়াইয়া তুলিতেই সে অহরহ ব্যস্ত ছিল, কিন্তু এখন পরের ঘরে, চোখের আড়ালে সমস্তই যে ভাঙ্গিয়া ধবসিয়া পড়িতেছে-কি করিয়া সে খাড়া করিয়া রাখিবে ? VS
পাতা:দর্পচূর্ণ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৯
অবয়ব