যে, শুধু নিজের দুটি চােখে সে মাধুৰ্য সবটুকু উপভোগ করতে পারা ধায় না ; সাধ হয়, মনের মতন আর দুটি চোখ এমনি করে একসাথে এমনি শোভা সম্ভোগ করতে পারে যদি তাকে বুঝিয়ে বলতে পারিও কি সুরমা, কঁাদচ যে ? সুরমা । না।--তুমি বল । যজ্ঞ । তুমি তখন তের বছরের নির্বান বৈষ্ণবী, হাতে মন্দিরা, গান গাইছিলে । সুরমা । যাও-আমি বুঝি গান গাইতে পারি ? যজ্ঞ । তখন ত পারতে, তার পর অনেক পরিশ্রমে তোমাকে পাই, তুমি ব্ৰাহ্মণের মেয়ে, বাল্যবিধবা । মা তোমার তীর্থে এসে আর ফিরে যেতে পারেন নি-স্বৰ্গে গিয়েচেন । আমার মার কাছে তোমায় এনে দিই, তিনি বুকে তুলে নিলেন - তার পর মৃত্যুকালে আবার আমাকেই ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন । সুরমা । যজ্ঞদাদা, আমার বাড়ি কোথায় ? যজ্ঞ । শুনেছি, কৃষ্ণনগরের কাছে । সুরম। আমার আর কেউ নেই ? যজ্ঞ । আমি আছি, তাই যে তোমার সব, সুরমা । সুরমার চক্ষু আবার জলে ভিজিয়া আসিল, কহিল, তুমি আমাকে আবার বেচিতে পার ? যজ্ঞ । না, তা পারি না। নিজেকে না বেচে ফেললে ওটি কিছুতেই হতে পারে না । সুরমা কথা কহিল নী, তেমনিভাবে সজল-নয়নে তাহার পানে চাহিয়া রহিল। বহুক্ষণ পরে ধীরে ধীরে কহিল, তুমি দাদা, আমি ছোট বোন-আমাদের দু’জনার মাঝখানে একটি বৌ আন না। দাদা ! যজ্ঞ । কেন বল দেখি ? সুরমা । সমস্ত দিন ধরে সাজিয়ে গুজিয়ে তাকে আমি তোমার কাছে বসিয়ে রাখব । 89
পাতা:দর্পচূর্ণ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৬
অবয়ব